প্রকাশের তারিখ: সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন করে চালানো হামলায় অন্তত ২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চারজন আশ্রয়প্রার্থী রয়েছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইসরায়েল ও হামাস সোমবার (৬ অক্টোবর) মিশরের শার্ম আল-শেখে পরোক্ষ আলোচনায় বসছে। আলোচনায় মূলত যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার ও বন্দী বিনিময় প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে।
যুদ্ধবিরতি আলোচনা ও অংশগ্রহণকারীরা
হামাসের পক্ষ থেকে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন খলিল আল-হাইয়া, আর ইসরায়েলের প্রতিনিধিদল নেতৃত্ব দিচ্ছেন রন ডার্মার। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আশা প্রকাশ করেছেন,
“এই সপ্তাহের মধ্যেই অবশিষ্ট বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে একটি চুক্তি হতে পারে।”
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন,
“আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে। প্রথম ধাপটি এই সপ্তাহেই সম্পন্ন হতে পারে। সবাইকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
গাজায় হামলা অব্যাহত
তবে আলোচনার আগে ও চলাকালীন সময়েও গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, রোববার মধ্য গাজার আজ-জুয়াইদা ও গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকায় বোমা হামলা চালানো হয়েছে।
গাজার সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরের সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৮,৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে এক বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে এক হাজারেরও বেশি। এছাড়া নিহতদের মধ্যে ১,৬৭০ জন চিকিৎসাকর্মী, ২৫৪ জন সাংবাদিক এবং ১৪০ জন উদ্ধারকর্মী রয়েছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ও আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রোববার এক বিবৃতিতে বলেন,
“পরিস্থিতি এখন বন্দী মুক্তির সবচেয়ে কাছাকাছি। ইসরায়েলকে হামলা বন্ধ করে আলোচনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”
ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাস অবশিষ্ট বন্দীদের মুক্তি দেবে এবং ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন,
“গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতেই থাকবে।”
আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,
“অবিলম্বে হামলা বন্ধ এবং বন্দী বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।”
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ইজ্জত আল-রিশেক এই সমর্থনকে “যুদ্ধের অবসান এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, আলোচনার অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে ট্রাম্প তার জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফকে মিশরে পাঠিয়েছেন।
উপসংহার:
যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে কূটনৈতিক আশার আলো দেখা গেলেও গাজায় চলমান হামলা সেই প্রত্যাশায় ছায়া ফেলছে। আলোচনার সফলতা এখন নির্ভর করছে উভয় পক্ষের সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক চাপের কার্যকারিতার ওপর।
সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, হোয়াইট হাউস

