মঙ্গলবার, ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে মস্কোর ওপর চাপ বাড়াতে ওয়াশিংটনের কড়া পদক্ষেপ

প্রকাশের তারিখ: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রবাস বুলেটিন

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর অংশ হিসেবে দেশটির দুটি বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি রসনেফট (Rosneft)লুকোয়েল (Lukoil)-এর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

হোয়াইট হাউসের এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, এই কোম্পানিগুলো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘যুদ্ধ যন্ত্র’–এর প্রধান অর্থনৈতিক উৎস হিসেবে কাজ করছে।


🔶 ট্রাম্পের মন্তব্য: “সময় এসেছে, আমরা অনেকদিন অপেক্ষা করেছি”

বুধবার (২২ অক্টোবর) ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে-এর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন,

“যতবার আমি ভ্লাদিমিরের সঙ্গে কথা বলি, ভালো আলোচনা হয়, কিন্তু তা কোথাও পৌঁছায় না। একদমই না। তাই আমি মনে করেছি, সময় এসেছে— আমরা অনেকদিন অপেক্ষা করেছি।”

তিনি আরও জানান, নিষেধাজ্ঞার এই প্যাকেজ “অসাধারণ” এবং যদি রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে রাজি হয়, তাহলে “অল্প সময়ের মধ্যেই” এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা সম্ভব।


🔶 অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের ব্যাখ্যা

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন,

“পুতিনের অযৌক্তিক যুদ্ধ শেষ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় এই পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। রসনেফট ও লুকোয়েল সরাসরি ক্রেমলিনের যুদ্ধতহবিলকে অর্থায়ন করছে।”

তিনি আরও বলেন, “হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির এখনই সময়।”


🔶 ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের সমর্থন

একই দিনে যুক্তরাজ্যও রসনেফট ও লুকোয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভস বলেন,

“বিশ্ববাজারে রাশিয়ান তেলের কোনো স্থান নেই।”

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন এক্স-এ পোস্ট করে জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন পেয়েছে, যাতে রাশিয়ার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) আমদানিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন,

“ইউরোপ ও আমেরিকা উভয় দিক থেকেই আগ্রাসীর ওপর যৌথ চাপ বজায় থাকবে।”


🔶 রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া: “বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট সৃষ্টি হবে”

লন্ডনে রাশিয়ার দূতাবাস থেকে জানানো হয়, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা “বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত করবে” এবং “উন্নয়নশীল দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে।”

দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়,

“এই ধরনের চাপ সৃষ্টি শান্তিপূর্ণ আলোচনাকে আরও জটিল করে তোলে এবং বৈশ্বিক উত্তেজনা বাড়ায়।”


🔶 বৈশ্বিক প্রভাব ও জ্বালানি বাজার

রসনেফট ও লুকোয়েল মিলে প্রতিদিন প্রায় ৩.১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি করে, যা রাশিয়ার মোট উৎপাদনের অর্ধেক এবং বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় ৬ শতাংশ
রাশিয়ার প্রধান ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে চীন, ভারত ও তুরস্ক
ট্রাম্প এসব দেশকেও রাশিয়ান তেল কেনা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।


🔶 চলমান শান্তি উদ্যোগ ও ব্যর্থতা

হোয়াইট হাউসের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে বুদাপেস্টে নির্ধারিত বৈঠকটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগের দিনই তিনি বলেন,

“আমি অর্থহীন বৈঠক চাই না। রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে রাজি না হলে আলোচনার কোনো মানে নেই।”

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেনের প্রস্তাবিত ১২ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। এতে যুদ্ধরেখা স্থির রাখা, নির্বাসিত শিশুদের ফেরত আনা এবং বন্দি বিনিময়ের প্রস্তাব রয়েছে।

কিন্তু মস্কো এখনো দনবাস অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহারের দাবি থেকে সরে আসেনি।


🔶 উপসংহার

বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের এই নতুন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার জ্বালানি খাত ও বৈদেশিক আয়ের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। তবে এতে ইউরোপীয় জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা বাড়তে পারে।
শান্তিচুক্তির পথে অগ্রগতি আনতে এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে— সেটিই এখন পর্যবেক্ষণের বিষয়।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version