মঙ্গলবার, ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রকাশের তারিখ: সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার | প্রবাস বুলেটিন

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা তিন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া ১৫ কর্মকর্তাকে আপাতত নিজেদের হেফাজতেই রাখতে চায় সেনা কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মকর্তারা সেনা হেফাজতেই থাকবেন।

সূত্রগুলো জানায়, মামলার তারিখে সেনাবাহিনী তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করবে এবং শুনানি শেষে পুনরায় হেফাজতে নেবে।

ট্রাইব্যুনাল ও সরকারের অবস্থান

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন,

“আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছেন। আইন অনুযায়ী আসামিকে গ্রেপ্তারের পর অনতিবিলম্বে আদালতে হাজির করতে হয়। এরপর আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন— তাঁরা কারাগারে থাকবেন নাকি জামিন পাবেন। সরকার চাইলে কোনো স্থাপনাকে কারাগার ঘোষণা করতে পারে, সে ক্ষেত্রে আদালতই নির্ধারণ করবেন আসামির অবস্থান।”

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার চাইলে কোনো স্থাপনাকে ‘সাবজেল’ বা ‘উপকারাগার’ ঘোষণা করতে পারে। অতীতে ২০০৭–০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে সংসদ ভবন এলাকায় সাবজেলে রাখা হয়েছিল।

অভূতপূর্ব গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

গত বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সেনাবাহিনীর ২৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, যা দেশের ইতিহাসে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জারি হওয়া পরোয়ানা।

তাঁদের মধ্যে ১৫ জন কর্মরত, একজন এলপিআরে (অবসরোত্তর ছুটি) আছেন, এবং বাকি ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। কর্মরত কর্মকর্তাদের সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে হেফাজতে নিয়েছে।

আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, ২২ অক্টোবরের মধ্যে সব আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে হবে।

সেনা হেফাজতে থাকা কর্মকর্তারা

বর্তমানে হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন—
মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কে এম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল, লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী, লে. কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম মুন।

একজন কর্মকর্তা, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিব এবং পরবর্তীতে ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ছিলেন।

অবসরপ্রাপ্তদের অধিকাংশই বিদেশে

সেনা–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরোয়ানাভুক্ত অবসরপ্রাপ্ত ৯ কর্মকর্তার বেশির ভাগই দেশ ছেড়েছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক—
লে. জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লে. জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।

এ ছাড়া রয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক (প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা), মেজর জেনারেল (অব.) তৌহিদুল ইসলাম, লে. কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক ও লে. কর্নেল (অব.) খায়রুল ইসলাম।

মামলার পটভূমি

গত বুধবার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় তিনটি মামলায়—

  • দুটি মামলা পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায়,

  • একটি মামলা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে

এই তিন মামলায় মোট ৩২ জন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন র‍্যাবের তিন সাবেক ডিজি— বেনজীর আহমেদ, এম খুরশিদ হোসেন ও হারুন অর রশিদ। তাঁদের মধ্যে অন্তত বেনজীর আহমেদ দেশের বাইরে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

আইনি জটিলতা: চাকরি থাকবে কি না

৬ অক্টোবরের ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে কোনো ব্যক্তি সরকারি চাকরি বা পদে থাকার অযোগ্য হন।

এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন,

“এই সংশোধনীতে যে ‘ডিসকোয়ালিফিকেশন’-এর কথা বলা হয়েছে, তার প্রয়োগবিধি এখনো প্রকাশিত হয়নি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এর ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। সেনাবাহিনীতে এটি কীভাবে কার্যকর হবে, তা জানতে হবে।”

উপসংহার

মানবতাবিরোধী অপরাধে এত সংখ্যক সক্রিয় সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও, তাঁদের অবস্থান ও আইনি মর্যাদা নিয়ে প্রশাসনিক ও আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে—যার নিষ্পত্তি নির্ভর করছে সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version