প্রকাশের তারিখ: ৬ নভেম্বর ২০২৫
প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক রিপোর্ট
বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের চিত্রে একদিকে আশার আলো, অন্যদিকে শঙ্কার ছায়া দেখা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৩ শতাংশেরও বেশি, কিন্তু রফতানি আয়ে টানা তিন মাস পতন রেকর্ড হয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা স্থিতিশীল হলেও রফতানি খাতে ধীরগতি অর্থনীতিতে নতুন চাপ তৈরি করছে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
🔹 রেমিট্যান্সে আশার আলো
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ১০.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩.৫৬% বেশি।
শুধু অক্টোবর মাসেই দেশে এসেছে ২.৫৬ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার বেশি।
মাসভিত্তিক হিসাবে —
-
জুলাইয়ে এসেছে ২.৪৮ বিলিয়ন ডলার
-
আগস্টে ২.৪২ বিলিয়ন ডলার
-
সেপ্টেম্বরে ২.৬৮ বিলিয়ন ডলার
-
অক্টোবরে ২.৫৬ বিলিয়ন ডলার
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রবাসীদের এই ধারাবাহিক রেমিট্যান্স প্রবাহ রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে। সরকার ও ব্যাংকিং খাতের ডিজিটালাইজেশন, প্রণোদনা বৃদ্ধি এবং হুন্ডি প্রতিরোধের কঠোর উদ্যোগে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়ছে।
🔹 রফতানিতে উদ্বেগ
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, অক্টোবর মাসে রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩৮২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৭.৪৩% কম। সেপ্টেম্বরে রফতানি কমেছিল ৪.৬১% এবং আগস্টে ২.৯৩%। ফলে প্রথম চার মাস শেষে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ২.২২%-এ।
রফতানি খাতের প্রতিনিধিরা বলছেন, ইউরোপ ও আমেরিকার মুদ্রাস্ফীতির কারণে ক্রেতারা নতুন অর্ডার দিচ্ছেন না, আর জ্বালানি সংকটে অনেক কারখানার উৎপাদন কমেছে। ফলে অর্ডার অনুযায়ী সরবরাহে পিছিয়ে পড়ছে রফতানিকারকরা।
🔹 খাতভিত্তিক রফতানির চিত্র
-
তৈরি পোশাক খাত: মোট রফতানির প্রায় ৮০% আসে এই খাত থেকে। জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪.৯%, কিন্তু পরবর্তী তিন মাসে পতন। অক্টোবরে রফতানি হয়েছে ৩০২ কোটি ডলার, যা গত বছরের চেয়ে ৮% কম।
-
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য: জুলাই–অক্টোবরে রফতানি হয়েছে ৪১ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১১% বেশি।
-
কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য: রফতানি কমেছে ১.৭৬%, দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ডলারে।
-
হোম টেক্সটাইল: অক্টোবরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রথম চার মাসে রফতানি বেড়েছে ৯.৫%, মোট আয় ২৮ কোটি ডলার।
-
পাট ও পাটজাত পণ্য: ইতিবাচক ধারায় আছে, রফতানি বেড়েছে ৪.৭৪%, মোট আয় ২৭.৭৪ কোটি ডলার।
🔹 রিজার্ভে স্বস্তি ফিরছে
প্রবাসী আয়ের জোয়ারে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে—
-
গ্রস রিজার্ভ: ৩২.১৪ বিলিয়ন ডলার
-
বিপিএম–৬ পদ্ধতিতে: ২৭.৩৪ বিলিয়ন ডলার
-
নিট রিজার্ভ (অপ্রকাশিত হিসাব): প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার
রিজার্ভের এই বৃদ্ধি আমদানি ব্যয় মেটানো ও ডলারের বাজারে স্থিতি আনতে সহায়তা করছে।
🔹 বিশ্লেষকদের মত
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন,
“রফতানিতে টানা তিন মাসের পতন অ্যালার্মিং। নীতিনির্ধারকদের এখনই সতর্ক হয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।”
অর্থনীতিবিদ ড. এম মাশরুর রিয়াজ মন্তব্য করেন,
“প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। তবে রফতানিতে পতনের বিষয়টি বড় সংকেত দিচ্ছে। এখনই সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।”
🔹 বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
-
রফতানি বৃদ্ধিতে নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা বাড়ানো
-
নতুন বাজার অনুসন্ধান ও বহুমুখীকরণ
-
উৎপাদন সক্ষমতা ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা
-
প্রবাসীদের জন্য প্রণোদনা ও ব্যাংকিং সুবিধা সম্প্রসারণ

