মঙ্গলবার, ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রকাশকাল: বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রবাস বুলেটিন

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এ বছর ডেঙ্গু চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হওয়া হাসপাতাল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২,৩১৪ জন রোগী, যা দেশের সরকারি ৫৮টি ডেঙ্গু চিকিৎসা কেন্দ্রের মধ্যে সর্বাধিক।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগীর অতিরিক্ত চাপ সামলাতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন। এতে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।


🏥 ওয়ার্ডে ঠাঁই নেই, বারান্দায়ও রোগী

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়ার্ডের ভেতরেই জায়গার অভাবে বারান্দা ও খোলা জায়গায় বিছানা পেতে রোগীদের রাখা হয়েছে। অষ্টম তলার শিশু ওয়ার্ডে ৪৬ জন, আর ১১ তলায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে ১০৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। প্রতিটি শয্যার পাশে ঝুলছে স্যালাইনের ব্যাগ; অভিভাবক ও আত্মীয়দের উপস্থিতিতে চলাফেরার জায়গাও ফুরিয়ে গেছে।

রক্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে ভোগান্তি। প্যাথলজি বিভাগের সামনে দীর্ঘ লাইন। সেখানে দাঁড়ানো আব্বাস উদ্দিন নামে এক রোগী বলেন,

“গুরুতর রোগীদের ওয়ার্ড থেকে নমুনা নেয়, কিন্তু বাকিদের নিজেই লাইনে দাঁড়াতে হয়। দুই ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে।”

হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নুরুল ইসলাম বলেন,

“চলতি বছর ডেঙ্গুতে আমাদের হাসপাতালে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর রোগীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে।”


📈 ঢাকা ও আশপাশের রোগী বাড়ছে দ্রুত

মুগদা হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, রোগীর বড় অংশই মান্ডা, বাসাবো, খিলগাঁও ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আসছেন। আগে ঢাকার বাইরের রোগী বেশি আসলেও এখন স্থানীয় রোগীর আধিক্য দেখা যাচ্ছে।

নরায়ণগঞ্জ থেকে আসা গাড়িচালক হাসান বলেন,

“আমার এলাকার অনেকে এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাই আমিও মুগদায় এসেছি।”

দাউদকান্দি থেকে আসা রিমি (১৬) নয় দিন ধরে ভর্তি। তার মা জুলিয়া বেগম জানান,

“মেয়ের পেটে পানি এসেছে, প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে, চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”

বরগুনার ফেরদৌসের বাবা আতিক হোসেন বলেন,

“রক্তের ব্যবস্থা আর খরচ—দুটোই বড় চ্যালেঞ্জ।”

গৃহকর্মী চম্পা জানান,

“মেয়ের ডায়রিয়া শুরু হওয়ায় হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়নি, ইতিমধ্যেই ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে।”


⚠️ ‘শক সিনড্রোম’ সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়

হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সত্যজিৎ সাহা জানান,

“এ বছর রোগীরা জ্বর হওয়ার দুই দিনের মধ্যেই হাসপাতালে আসছেন, তবে অনেকেই উপসর্গ না থাকলেও ভয়ে ভর্তি হচ্ছেন। সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে ‘শক সিনড্রোম’। কেবল প্লাটিলেট কমে যাওয়া মানেই বিপদ নয়—১০ হাজারের ওপরে থাকলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”

তিনি আরও জানান, এ বছর শক সিনড্রোমের হার তুলনামূলক বেশি এবং সেপ্টেম্বরের পর থেকে রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে।


🧬 দেশজুড়ে আক্রান্ত ৫৬ হাজার ছাড়াল

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, এ বছর দেশে ৫৬,২৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ২৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৮৪১ জন ভর্তি ও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বর্তমানে দেশে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ২,৬৬৫ জন; এর মধ্যে ঢাকায় ৯৭১ জন এবং ঢাকার বাইরে ১,৬৯৪ জন।


🦟 বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা ও করপোরেশনের পদক্ষেপ

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কীটতত্ত্ববিদরা সতর্ক করে বলছেন, মুগদা ও এর আশপাশের এলাকা ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত। তাই দ্রুত আক্রান্তদের ঠিকানা বিশ্লেষণ করে বাড়ি-বাড়ি অভিযান চালাতে হবে।

কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন,

“আক্রান্ত ও মৃতদের ঠিকানা অনুযায়ী মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে, নইলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন,

“যেসব এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে, সেখানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ঢাকায় মারা যাওয়া অনেক রোগীই আসলে বাইরে থেকে এসেছেন।”


📊 মাসভিত্তিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি ২০২৫

মাস ভর্তি রোগী মৃত্যু
সেপ্টেম্বর ১৫,৮৬৬ জন ৭৬ জন
অক্টোবর (১–১৪ তারিখ) ৮,৯১৫ জন ৪০ জন
মোট (১ জানুয়ারি–১৪ অক্টোবর) ৫৬,২৫৭ জন ২৩৮ জন
Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version