প্রকাশের তারিখ: মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক │ সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স
গাজা যুদ্ধের অবসান ও বন্দি বিনিময় ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী মিশরের শার্ম আল শেখে শুরু হয়েছে পরোক্ষ ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা। মিশরীয় শহরটিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
মূল আলোচ্য বিষয়: বন্দি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি
ফিলিস্তিনি ও মিশরীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলোচনার মূল ফোকাস বন্দি বিনিময়ের প্রস্তুতি—যেখানে হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে গাজায় আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে।
হামাস জানিয়েছে, তারা শান্তি পরিকল্পনার কিছু দিককে ‘আংশিকভাবে গ্রহণ’ করেছে; তবে নিরস্ত্রীকরণ ও গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনে তাদের ভূমিকা নিয়ে কোনো অবস্থান নেয়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, “সামনের দিনগুলোতে জিম্মিদের মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।”
আলোচনায় কারা ছিলেন
শার্ম আল শেখে অনুষ্ঠিত আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন—
- 
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ,
 - 
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার,
 - 
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি।
 
তারা পৃথকভাবে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
ট্রাম্পের মন্তব্য ও শান্তি পরিকল্পনা
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন,
“আমাদের সামনে এখন একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তির বাস্তব সুযোগ রয়েছে।”
ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় প্রস্তাব করা হয়েছে—
- 
অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা,
 - 
৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে শতাধিক গাজাবাসীর মুক্তি,
 - 
গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তা পাঠানো,
 - 
হামাসের প্রশাসনিক ভূমিকা বাতিল করা,
 - 
এবং দীর্ঘমেয়াদে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করা।
 
তবে নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে বলেছেন, “ইসরায়েল একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের বিপক্ষে থাকবে।”
হামাসের প্রতিক্রিয়া
হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিনিময় প্রস্তাব অনুযায়ী জীবিত ও মৃত সকল ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি,” তবে এটি ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার পূর্ণ অনুমোদন নয়।
তারা জানিয়েছে, গাজার প্রশাসন “একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি টেকনোক্রেট সরকারের হাতে” হস্তান্তরের বিষয়টি এখনো আলোচনাাধীন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
- 
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “এই পরিকল্পনা মর্মান্তিক সংঘাতের অবসানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে।”
 - 
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির জন্য আমরা মার্কিন প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই।”
 - 
ইরানও প্রথমবারের মতো এই পরিকল্পনার প্রতি “আংশিক সমর্থনের ইঙ্গিত” দিয়েছে।
 
গাজায় সর্বশেষ পরিস্থিতি
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ১৬০ জন, যাদের মধ্যে ১৮ হাজার শিশু রয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ গাজায় নতুন করে বোমাবর্ষণ চালাচ্ছে। ইসরায়েল বলছে, এসব হামলার উদ্দেশ্য “অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা।”
হামাসের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল অভিযোগ করেছেন,
“চার সপ্তাহ ধরে কোনো ত্রাণ ট্রাক গাজায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি।”
গাজা শহরের বহু এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, আর লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত।
বিশ্লেষণ
এই আলোচনাকে বিশ্লেষকরা “গাজা সংঘাতের সম্ভাব্য মোড় ঘোরানো অধ্যায়” হিসেবে দেখছেন। তবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, আলোচনার সাফল্য নির্ভর করছে বন্দি বিনিময় চুক্তির বাস্তবায়ন ও উভয় পক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।
📍 উপসংহার:
দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর এই আলোচনাকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সম্ভাব্য মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে গাজার শাসন ব্যবস্থায় হামাসের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নির্ধারণ না হলে স্থায়ী সমাধান এখনও দূর অনিশ্চিত।

