‘নিজে শপথ নেওয়া’ ফৌজদারি অপরাধ—সরকারের কড়া বার্তা
স্টাফ রিপোর্টার | ঢাকা |
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন আর শপথ নিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বুধবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গেজেট ও মেয়াদের নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ায় শপথ নেওয়ার আর সুযোগ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হলেও, ২৬ মে ছিল শপথ নেওয়ার সর্বশেষ দিন। বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় তখন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন শপথের মেয়াদ শেষ।”
‘আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়েছি’
উপদেষ্টা জানান, বিষয়টি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। “তাদের পরামর্শ ছিল, যেহেতু বিষয়টি বিচারাধীন, তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।”
‘ঢাকা দক্ষিণ সিটিকে অবরুদ্ধ করেছিল ইশরাক সমর্থকরা’
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে ইশরাকের শপথ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন তার সমর্থকরা। পরে কর্মসূচিতে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও যোগ দেয়, যার ফলে নগর ভবনের কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
এই আন্দোলনের সমালোচনা করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন,
“এক কোটি মানুষের শহর ঢাকা দক্ষিণ। সেখানে সিটি করপোরেশন অবরুদ্ধ করে রাখা মানে জনগণের সেবা বাধাগ্রস্ত করা। সরকারি অফিসে তালা দেওয়া, মেয়রের চেয়ারে বসা, অফিসারদের কাজ করতে না দেওয়া— এগুলো ফৌজদারি অপরাধ।”
‘ইশরাক গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার, তাই তার প্রতি সংযত মন্তব্য’
তবে ইশরাকের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান না নিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, “তিনি গণঅভ্যুত্থানের একজন অংশীজন। এজন্য আমরা তাকে টার্গেট করে কোনো বক্তব্য দিইনি। তবে এমন দায়িত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, তিনি আইনগতভাবে বিষয়টি বিবেচনা করুন। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক সহনশীল ও গঠনমূলক থাকুক—এটাই আমরা চাই।”
পটভূমি: কীভাবে মেয়র হলেন ইশরাক?
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে পরাজিত হন ইশরাক হোসেন।
কিন্তু গত ২৭ মার্চ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল আগের ফল বাতিল করে ইশরাককে জয়ী ঘোষণা করে। এরপর থেকেই শপথের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিএনপি এবং ইশরাক সমর্থকরা।
শপথ না হওয়ায় ৩ জুন ইশরাক ঘোষণা দেন, “সরকার শপথ না পড়ালে নিজেই শপথ নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসবেন।” যদিও পরে তিনি নিজে শপথ না নিলেও ঈদের পর নগর ভবনে গিয়ে কর্মচারীদের নিয়ে সভা করেন। সেই সভার ব্যানারে তার নামের আগে লেখা ছিল— ‘মাননীয় মেয়র’।
উপসংহার
সরকারি দপ্তর অবরুদ্ধ রাখা, বিচারাধীন অবস্থায় চূড়ান্ত পদক্ষেপ দাবি করা এবং ‘নিজে শপথ’ নেওয়ার ঘোষণা—সবকিছুই বাংলাদেশের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ও আইনকাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা ইশরাককে ঘিরে সরকারের কৌশল এখনো সংবেদনশীল। যদিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, আইন ও সময়সীমা অতিক্রম করায় আর কোনো সুযোগ নেই।
সম্পাদনা ডেস্ক
সূত্র: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার প্রেস ব্রিফিং, আদালতের রায়, সিটি করপোরেশন সূত্র ও রাজনৈতিক আন্দোলনের পর্যবেক্ষণ।