শুক্রবার, ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

📅 প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২৫
✍️ প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক রিপোর্ট

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে এক নারীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনা নিয়ে নতুন মোড় নিয়েছে। উভয় পক্ষ থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলার প্রশাসনিক মহলে তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।


🔹 ঘটনার সূত্রপাত: ভাইরাল ছবি ও ভিডিও

শুক্রবার (২০ জুন) সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শরীয়তপুরের ডিসির সঙ্গে এক নারীর ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় ও জাতীয় মহলে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক দপ্তর ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।


🔹 নারী বলছেন: ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা’

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে থাকা নারীর নাম সেলিনা ইসলাম লিজা (৩৬), যিনি টাঙ্গাইল সদরের বাসিন্দা ও বর্তমানে ঢাকার মিরপুরে বসবাস করছেন। তিনি মিরপুরের বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম সংগ্রামের স্ত্রী ছিলেন। তাদের ঘরে রয়েছে দুই সন্তান।

লিজার দাবি,
“ডিসি আশরাফ উদ্দিন আমার স্বামীর বড় বোনের জামাই। পারিবারিক আত্মীয়তার সম্পর্ককে ব্যবহার করে তিনি আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেন। কোরআন শরিফে হাত রেখে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। সে বিশ্বাসে আমি স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সে যাই। কিন্তু পরে তিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন।”

তিনি অভিযোগ করেন,
“উনি আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন। যখন তার নিজের পারিবারিক সংকট আসে, তখন আমাকে সামনে এনে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। এখন বলছেন আমি তাকে ব্ল্যাকমেইল করছি।”


🔹 ডিসির পাল্টা বক্তব্য: ‘ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল’

অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান,
“লিজা আমার আত্মীয় এবং পারিবারিকভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এক সময় তিনি আমাকে ঘনিষ্ঠ করে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। প্রতি মাসে টাকা দিতে হতো। টাকা পাঠানোর ব্যাংক ট্রান্সফারের প্রমাণ আমার কাছে আছে।”

তিনি আরও বলেন,
“লিজা আমাকে স্ত্রীকে ত্যাগ করার শর্ত দেন এবং বিয়েতে রাজি না হলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন।”


🔹 বিয়ে না হলে টাকা, না হলে ভিডিও ফাঁস?

শরীয়তপুর জেলা জজ কোর্টের এক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“গত দুই মাস ধরে দুই পক্ষকে সমঝোতায় আনার চেষ্টা চলছিল। আমি নিজেই বিয়ের পরামর্শ দিয়েছিলাম। তবে নারী পক্ষের পক্ষ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ দাবি করা হয় এবং ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধের শর্ত দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে পড়ে।”


🔹 ডিসির ছুটি ও প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা

ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার রাতেই জেলা প্রশাসক শরীয়তপুর ত্যাগ করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি ছুটিতে রয়েছেন। তবে কার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে, সেই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি ২৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং এর আগে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ও নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।


🧭 প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ:

এই ঘটনার পর প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসযোগ্যতা, প্রশাসনিক নৈতিকতা এবং ব্যক্তিগত আচরণ—তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সামনে এসেছে:

  • নৈতিক অবক্ষয়ের প্রশ্ন: একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন ভিডিও ফাঁস প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

  • ব্যক্তিগত সম্পর্ক বনাম পেশাদার অবস্থান: পারিবারিক আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে কোনো কর্মকর্তা যদি সম্পর্ক গড়ে তোলেন, সেটি গুরুতর অনৈতিকতা এবং শাস্তিযোগ্য আচরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

  • অফিশিয়াল তথ্য স্বচ্ছতার অভাব: ডিসির ছুটি, দায়িত্ব হস্তান্তর, কিংবা কোনো প্রশাসনিক তদন্তের ঘোষণা না থাকায় জেলা প্রশাসনে অস্বচ্ছতা বাড়ছে।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version