প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক | ২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
ইরানের ওপর মার্কিন হামলাকে ‘অপ্ররোচিত ও অন্যায্য’ আখ্যা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সোমবার (২৩ জুন) মস্কোয় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। পুতিন বলেন, রাশিয়া ইরানি জনগণের পাশে রয়েছে এবং তাদের প্রয়োজন হলে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
বৈঠকের শুরুতেই টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বক্তব্যে পুতিন বলেন, “ইরানের বিরুদ্ধে এই একতরফা আগ্রাসন পুরোপুরি অপ্ররোচিত ও অন্যায্য।” তবে তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করেননি। বরং ‘ইরানের ওপর হামলা’ বলে একটি সাধারণ রেফারেন্স ব্যবহার করেন।
তিনি আরও বলেন, “মস্কোতে আজ আপনার উপস্থিতি কঠিন এই পরিস্থিতিতে আলোচনার সুযোগ তৈরি করেছে। আমরা একসঙ্গে চিন্তা করতে পারব যে কীভাবে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।”
ক্রেমলিনের প্রতিক্রিয়া ও মধ্যস্থতার প্রস্তাব
বৈঠকের ঠিক আগে রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয় ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে জানায়, তারা এই হামলার নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করছে। মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “এ অঞ্চলে উত্তেজনার নতুন ঢেউ দেখা দিয়েছে এবং আমরা এ হামলার নিন্দা করছি ও গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি।”
রাশিয়া ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে পুতিনের মধ্যস্থতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইরানের প্রতিক্রিয়া ও চিঠি প্রদান
বৈঠকে আরাগচি বলেন, “ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের নিন্দা করে রাশিয়া ইতিহাসের সঠিক পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।” একইসঙ্গে তিনি জানান, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এবং প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
খামেনির চিঠি: রুশ সহায়তার আহ্বান
রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষিতে আয়াতুল্লাহ খামেনি একটি চিঠি পুতিনের কাছে পাঠিয়েছেন, যা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি বৈঠকে হস্তান্তর করেন। চিঠিতে রাশিয়ার আরও সরাসরি ও জোরালো সমর্থন প্রত্যাশা করেছে তেহরান।
তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ইরানকে সামরিক সহায়তার ঘোষণা আসেনি। পুতিন বলেন, “আমরা ইরানি জনগণকে সহায়তা করার চেষ্টা করছি,” কিন্তু কী ধরনের সহায়তা দেওয়া হতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। মুখপাত্র পেসকভ বলেন, “সহায়তার ধরণ নির্ভর করবে ইরানের প্রয়োজনীয়তার ওপর।”
সংকট ও সমীকরণ
গত কয়েক সপ্তাহে ইসরাইলের একাধিক হামলার পর ইরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হামলা নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া এখনো ইরানকে সামরিকভাবে সহায়তা না করলেও কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে তেহরান ও মস্কোর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং রাশিয়ার অবস্থান ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
সূত্র: বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স