সোমবার, ২৭শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

📅 প্রকাশিত: ৬ আগস্ট ২০২৫, বুধবার
✍️ প্রতিবেদক: প্রবাস বুলেটিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের ঘোষণা দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ট্রাম্প হুঁশিয়ার করেছেন—এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিরতি না হলে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা সব দেশের পণ্যে শতভাগ পরোক্ষ শুল্ক আরোপ করা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে বৈশ্বিক অর্থনীতি, বিশেষ করে জ্বালানি ও প্রযুক্তিপণ্যের বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।


🔹 ‘পরোক্ষ শুল্ক’ মানে কী?

এটি এমন এক শুল্ক ব্যবস্থা, যেখানে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করা যেকোনো দেশের পণ্যে আমদানির সময় ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। যেমন: ভারত, চীন বা তুরস্ক—যারা রাশিয়ার জ্বালানি কিনছে—তাদের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিগুণ দামে প্রবেশ করবে।

“আমি বাণিজ্যকে যুদ্ধ থামানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছি, এবারো করবো।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প, এক মাস আগে সিএনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে


🔹 জ্বালানির ওপর প্রভাব: মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক রাশিয়া। তাদের প্রধান ক্রেতা হলো চীন, ভারত ও তুরস্ক। এসব দেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শাস্তিমূলক শুল্কের মুখে পড়ে, তাহলে তেলের জোগান সংকুচিত হবে এবং বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম বাড়বে

কিয়ারান টমকিনস, ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের বিশ্লেষক বলেন:

“এই শুল্ক সরবরাহ হ্রাস করবে। ফলে তেলের দাম বাড়বে, যা ২০২২ সালের মতো বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে তুলতে পারে।”

তবে ট্রাম্প আশ্বস্ত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব রেকর্ড তেল উৎপাদন এবং ওপেকের অতিরিক্ত সক্ষমতা বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে।


🔹 ভারতের বিরুদ্ধে শুল্ক: আইফোন আমদানিও ক্ষতিগ্রস্ত

২০২২ সালের পর রাশিয়ার অন্যতম বড় তেল ক্রেতায় পরিণত হয়েছে ভারত। ট্রাম্প বলছেন, এটি যুদ্ধযন্ত্রে জ্বালানি জোগানোর সামিল। এ কারণে ভারত থেকে আমদানি করা সব পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হবে।

এর প্রভাব পড়বে আইফোনসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যে, যেগুলো এখন ভারত থেকে রপ্তানি হয়। বর্তমানে এই পণ্যে ২৫% শুল্ক থাকলেও ট্রাম্প জানিয়েছেন, সেটি দ্বিগুণ হতে পারে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া:
এক বিবৃতিতে দেশটি বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্র নিজেও এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানির কাঁচামাল আমদানি করছে, যার পরিমাণ ২০২৪ সালে ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।”


🔹 চীনের ক্ষেত্রে শুল্ক বাস্তবায়ন কঠিন

চীন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা। তবে চীনের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য এতটাই বিস্তৃত যে, ট্রাম্পের শুল্ক বাস্তবায়ন সহজ হবে না।

সাইমন ইভেনেট, আইএমডি বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক বলছেন:

“যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে পাঁচগুণ বেশি পণ্য আমদানি করে। এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্ক আরও তলানিতে নিয়ে যাবে।”


🔹 ইউরোপের সংকট: জ্বালানি নির্ভরতা কাটেনি

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্ক এখনো রাশিয়ার জ্বালানি ব্যবহার করছে। যদিও ইইউ ২০২৭ সালের মধ্যে আমদানি পুরোপুরি বন্ধের লক্ষ্য নিয়েছে, তবুও বর্তমানে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে আসতে পারেনি তারা।

নতুন ১০০% শুল্ক কার্যকর হলে ইউরোপীয় রপ্তানিকারকেরা মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না, বিশেষ করে ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য খাতে।


🔹 রাশিয়ার অর্থনীতি কি ভেঙে পড়বে?

২০২৪ সালে রাশিয়া ৪.৩% প্রবৃদ্ধির দাবি করলেও ২০২৫ সালে তা ০.৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যয় এখন জিডিপির ৬.৩%, যা স্নায়ুযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ। অর্থনীতির এক-তৃতীয়াংশ এখনো জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল।

রিচার্ড নেফিউ, নিষেধাজ্ঞা বিশেষজ্ঞ বলেন:

“নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেয়েও বড় কাজ হচ্ছে তার বাস্তবায়ন। রাশিয়া ছায়া নৌবহর (‘শ্যাডো ফ্লিট’) তৈরি করে তেল রপ্তানি চালিয়ে যাচ্ছে।”


🔚 উপসংহার: ট্রাম্পের লক্ষ্য রাশিয়ার অর্থপ্রবাহ বন্ধ করে যুদ্ধ থামানো

ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি—এই শুল্কের মাধ্যমে রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবাহ বন্ধ করে যুদ্ধ থামানো যাবে। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে সহায়তা বাড়ানোর মাধ্যমেও এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটানো সম্ভব বলে হোয়াইট হাউস মনে করছে।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version