ওয়াশিংটন, ২৮ জুন ২০২৫:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়েছে—এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য তাঁর কাছে নেই। বৃহস্পতিবার পেন্টাগনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এ বক্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক দাবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংকার-বাস্টার’ হামলা
গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমানগুলো ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এসময় ব্যবহৃত হয় এক ডজনেরও বেশি ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা। এসব বোমা ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় আঘাত হানার জন্য বিশেষভাবে তৈরি।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ বলেন, “আমি এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য জানি না, যা বলছে পারমাণবিক উপাদান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যা যেখানে থাকার কথা, তাই ছিল।” তিনি এ হামলাকে “ঐতিহাসিকভাবে সফল” বলে উল্লেখ করেন।
সাংবাদিকদের ‘খাটো দৃষ্টিভঙ্গি’ নিয়ে সমালোচনা
সংবাদ সম্মেলনে হেগসেথ অভিযোগ করেন, “কিছু সাংবাদিক ইচ্ছাকৃতভাবে এই সফল অভিযানের গুরুত্ব খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছেন।” প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এক পর্যবেক্ষণ পোস্টে বলেন, “ফোর্দো স্থাপনার বাইরের ট্রাক ও গাড়িগুলো মূলত কংক্রিট শ্রমিকদের, যারা টানেলের মুখ ঢাকতে কাজ করছিলেন।”
তবে তিনি তাঁর দাবির পক্ষে কোনো সরাসরি প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের ভিন্নমত
মার্কিন প্রশাসনের আশাবাদের বিপরীতে কয়েকজন পশ্চিমা গোয়েন্দা বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেন, ইরান হামলার আগেই ফোর্দো স্থাপনাটি থেকে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের একটি অংশ সরিয়ে ফেলতে পারে।
স্যাটেলাইট প্রযুক্তি কোম্পানি ম্যাক্সার টেকনোলজিসের প্রকাশিত চিত্রে হামলার আগের দিনে ফোর্দো স্থাপনার প্রবেশপথে অস্বাভাবিক যান চলাচল দেখা গেছে।
এক জ্যেষ্ঠ ইরানি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ৬০ শতাংশ মাত্রার ইউরেনিয়ামের বড় অংশ হামলার আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ইউরোপীয় গোয়েন্দা মূল্যায়নের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুত কেবল ফোর্দোতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে।
ইরানের পাল্টা হুঁশিয়ারি
এই পরিস্থিতিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বৃহস্পতিবার সতর্ক করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে আবার হামলা চালালে, মধ্যপ্রাচ্যে থাকা তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলো হবে ইরানের পাল্টা আঘাতের লক্ষ্যবস্তু।”
হামলার পরিণতি পর্যবেক্ষণে
মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কতটা পিছিয়েছে, তা নিরূপণে এখনো বিশ্লেষণ চলছে। বৃহস্পতিবার একটি গোপন ব্রিফিংয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, গোয়েন্দাপ্রধান জন র্যাটক্লিফ এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন মার্কিন সিনেট সদস্যদের বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনাকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে, যার প্রভাব পড়তে পারে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের নিরাপত্তা ভারসাম্যে।