📅 প্রকাশকাল: ২২ জুন ২০২৫
✍️ প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক রিপোর্ট
যুক্তরাজ্যে সফরকালে বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশের রাজনীতি, নির্বাচন, বিচারিক প্রক্রিয়া ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন। এ সময় তিনি বলেন, “আমরা এখনো আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি। তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, তা নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর।”
১২ জুন লন্ডনে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির সাংবাদিক রাজিনি বৈদ্যনাথনের নেওয়া এই সাক্ষাৎকারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্য উঠে এসেছে। তার কথায় স্পষ্ট, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা, সেটা নির্ধারিত হবে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ও আইনি কাঠামোর ভিত্তিতে।
🔹 নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি না?
প্রশ্ন উঠলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন,
“আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি, বরং তাদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।”
তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে নির্দিষ্ট কোনো দলের অংশগ্রহণ নয়, বরং সব ভোটারের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগই হল মূল বিষয়।
🔹 শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তার বিচার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন,
“তাকে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। বিচার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং তা সম্পূর্ণ আইনি কাঠামোর মধ্যেই চলবে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনাও হবে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায়।”
তবে তিনি ভারতের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ না করলেও বলেন,
“সমস্যা শেখ হাসিনার ভারতে থাকা নয়, সমস্যা হচ্ছে তিনি এখনও বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন।”
🔹 আওয়ামী লীগপন্থীদের গ্রেফতার নিয়ে সমালোচনা
আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী ও সমর্থক গ্রেফতারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্ট ভাষায় বলেন,
“অন্তর্বর্তী সরকারকে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তুলনা করাকে দুঃখজনক ও বাস্তবতাবিবর্জিত মন্তব্য হিসেবে দেখি। আমাদের সরকার আইনি প্রক্রিয়ায় কাজ করছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জায়গা থেকে নয়।”
🔹 রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সরকারের অবস্থান
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংকট এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টি কমে যাওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন,
“বাংলাদেশ এই সংকট একা সামাল দিতে পারবে না। এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব।”
তিনি জানান, জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে কক্সবাজার সফর করে তিনি এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবি তুলেছেন।
তবে রোহিঙ্গাদের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে তিনি দ্বিমত পোষণ করে বলেন,
“এটি কোনো সমাধান নয়। কারণ স্থানীয় জনগণ ইতোমধ্যেই মনে করে, আন্তর্জাতিক সহায়তা কেবল রোহিঙ্গাদের জন্য আসছে, অথচ তারা নিজেরাই কষ্টে আছে।”
🗣️ বিশ্লেষণ: রাজনৈতিক বার্তায় দ্বৈততা নাকি কৌশলী কূটনীতি?
বিশ্লেষকদের মতে, অধ্যাপক ইউনূসের সাক্ষাৎকারে দুটি দিক স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে:
-
নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে দায় সরিয়ে নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ হস্তান্তর
-
আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ না করে একটি নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক ছাঁকনি তৈরি করা
এতে একদিকে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের চিত্র দেখানো সম্ভব হচ্ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক মাঠে প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রাখাও সহজতর হচ্ছে।