সোমবার, ১০ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৫শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে আসছে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে এবং রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ব্যর্থ হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ হ্রাস, শিল্প খাতে জ্বালানি সরবরাহে অনিশ্চয়তা ও নানাবিধ দুর্নীতিকে এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল (২২ আগস্ট) রাজধানীতে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ সতর্কবার্তা দেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) ড. মঞ্জুর হোসেন, সিপিডি’র ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (গবেষণা) মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের, এডিবি’র অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মো. রাবিউল ইসলামসহ অনেকে।

মূল বক্তব্যগুলো:

  • বেসরকারি বিনিয়োগ হ্রাস: ডিসিসিআই সভাপতি জানান, ২০২৫ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২.৪৮%-এ নেমে এসেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রপ্তানি কমেছে ৩.০৯%, অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৪৬.৮%।

  • সুদের হার বৃদ্ধি: ২০২৪ সালের জুনে ১১.৫২% থেকে বেড়ে ২০২৫ সালের মে মাসে সুদের হার দাঁড়িয়েছে ১২.১১%।

  • ঋণনির্ভর উন্নয়ন পরিকল্পনা: ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এডিপি বাস্তবায়ন পুরোপুরি ঋণের ওপর নির্ভরশীল, যা টেকসই নয়। অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ও কর আহরণ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

  • দুর্নীতির প্রভাব: ড. এ কে এনামুল হক জানান, কেবল সিলেটের সাদাপাথর কাণ্ডেই প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার অস্বচ্ছ লেনদেন হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন ছাড়া অর্থনীতিকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।

  • রাজস্ব ঘাটতি ও করদাতার সংখ্যা কম: মাত্র ২৩ লাখ করদাতা দিয়ে দেশ চালানো সম্ভব নয়। এনবিআরের প্রধান কাজ হওয়া উচিত নতুন করদাতা বৃদ্ধি করা, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কর আদায়ের পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের হয়রানিতেই বেশি মনোযোগী।

  • জ্বালানি সংকট ও নিরাপত্তাহীনতা: মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের বলেন, শুধু উচ্চ সুদের হার নয়, জ্বালানি স্বল্পতা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতিও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করছে।

করণীয়:

অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে বক্তারা কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপের সুপারিশ করেছেন—

  • ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা আনয়ন

  • রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ

  • কর আদায় বাড়াতে নতুন করদাতা অন্তর্ভুক্তি

  • দুর্নীতি দমনে কঠোর ব্যবস্থা

  • বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি

উপসংহার

সেমিনারে বক্তারা সতর্ক করেন, রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ও বেসরকারি খাতকে আস্থা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অর্থনীতির ধীরগতি বড় ধরনের বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version