আন্তর্জাতিক ডেস্ক | মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট
গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলের ধারাবাহিক বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন পাঁচ সাংবাদিক ও চার স্বাস্থ্যকর্মী। এ হামলার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
দ্বিগুণ হামলার কৌশল
সোমবার রাতে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে হাসপাতালটিতে দুটি হামলা চালানো হয়। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, এটি ছিল ‘ডাবল-ট্যাপ’ হামলা। প্রথম হামলায় হাসপাতালের চতুর্থ তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু সময় পর দ্বিতীয় হামলায় ঘটনাস্থলে পৌঁছানো জরুরি সেবাদাতা ও অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা লক্ষ্যবস্তু হন।
হামলায় নিহত সাংবাদিকরা হলেন—
-
মোহাম্মদ সালামা (আল জাজিরা ক্যামেরাপারসন)
-
হুসাম আল-মাসরি (রয়টার্সের চুক্তিভিত্তিক কর্মী)
-
মারিয়াম আবু দাগ্গা (এপি ও অন্যান্য গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করতেন)
-
মোয়াথ আবু তাহা (ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক)
-
আহমেদ আবু আজিজ (ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক)
এছাড়া একজন সিভিল ডিফেন্স সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার কর্তৃপক্ষ।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য ও তদন্ত দাবি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীদের মৃত্যুকে “দুঃখজনক দুর্ঘটনা” আখ্যা দিয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ইসরায়েলের এ ধরনের তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
-
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস ঘটনাটিকে নৃশংস বলে উল্লেখ করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
-
এপি ও রয়টার্স ইসরায়েলের কাছে “জরুরি ও স্বচ্ছ জবাবদিহি”র দাবি জানিয়েছে।
-
সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি (সিপিজে) একে যুদ্ধাপরাধ আখ্যায়িত করে বলেছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে।
-
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়ন একে “নৃশংস গণহত্যা” হিসেবে বর্ণনা করেছে।
-
কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, কাতার, সৌদি আরব ও কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
চলমান সংঘর্ষে সাংবাদিকদের প্রাণহানি
সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি জানিয়েছে, চলমান ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৯২ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। সোমবারের এই হামলা গাজায় সাংবাদিকদের ওপর অন্যতম প্রাণঘাতী ইসরায়েলি হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সমালোচনার ঝড়
জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ–এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, “এই হামলা আসলে সেই কণ্ঠগুলোকে স্তব্ধ করা, যারা দুর্ভিক্ষে মারা যাওয়া শিশুদের কথা জানাচ্ছিলেন।”
ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, প্রথম বিস্ফোরণের পর চিকিৎসকেরা রক্তে ভেজা কাপড় দেখাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই দ্বিতীয় বিস্ফোরণে পুরো ভবন কেঁপে ওঠে। এতে আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে থাকেন সবাই।
👉 সারসংক্ষেপ: গাজার নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলের দ্বৈত হামলায় সাংবাদিক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় তুলেছে এবং আন্তর্জাতিক মহল স্বচ্ছ তদন্ত ও জবাবদিহি দাবি করছে।