প্রকাশের তারিখ: ৬ নভেম্বর ২০২৫
নিউজ ডেস্ক | প্রবাস বুলেটিন
নিউ ইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি নানা দিক থেকেই ইতিহাস গড়েছেন। ১৮৯২ সালের পর তিনি শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র, পাশাপাশি আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবেও নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছেন।
🔹 অপ্রত্যাশিত সাফল্যের গল্প
গত বছর প্রাতিষ্ঠানিক দলীয় সমর্থন ছাড়াই সীমিত অর্থ ও প্রচার নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন মামদানি। ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্ট হিসেবে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস সিলওয়ার মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করে নিউ ইয়র্কবাসীর আস্থা অর্জন করেন তিনি।
🔹 তরুণ প্রজন্মের মুখ
মামদানি তরুণ, ক্যারিশম্যাটিক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয়। তিনি যে ধরনের রাজনীতির প্রতীক—তা হলো বামপন্থিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারভিত্তিক রাজনীতি, যেখানে জনগণের প্রাত্যহিক জীবনের বিষয়গুলোই প্রাধান্য পায়।
তার নীতি অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে—
-
বিনামূল্যে শিশু যত্নের ব্যবস্থা
-
গণপরিবহন সম্প্রসারণ
-
বাজার অর্থনীতিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ জোরদার
🔹 বিতর্ক ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব
তবে সমালোচকরা সতর্ক করেছেন, আমেরিকার বৃহত্তর ভোটার শ্রেণির কাছে এই ধরনের ‘অতি-বামপন্থি’ রাজনীতি জনপ্রিয় নাও হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে মামদানিকে “সমাজতান্ত্রিক হুমকি” বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুলও ইঙ্গিত দিয়েছেন, মামদানির প্রস্তাবিত কর বৃদ্ধির নীতির বিরোধিতা করবেন তিনি। ফলে মেয়র হিসেবে মামদানিকে রাজনৈতিক বাস্তবতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার সঙ্গে সমঝোতা করে এগোতে হবে।
🔹 গাজা ইস্যু ও বৈদেশিক অবস্থান
গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছেন মামদানি। এমনকি তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন—ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিউ ইয়র্কে প্রবেশ করলে তাকে “যুদ্ধাপরাধী” হিসেবে গ্রেপ্তার করা উচিত। এই অবস্থান ভবিষ্যতে তার প্রশাসনের জন্য কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
🔹 নতুন প্রজন্মের আশা ও পরীক্ষা
আগামী জানুয়ারিতে তিনি শপথ নেবেন। তখন শুরু হবে তার প্রকৃত পরীক্ষা—যেখানে তাকে একদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক প্রতিরোধ, অন্যদিকে নিজ দলের অভ্যন্তরীণ চাপ মোকাবিলা করতে হবে।
তবু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জোহরান মামদানি আমেরিকার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক নতুন ধরনের রাজনীতির প্রতীক—যেখানে ধর্ম, জাতিগত পরিচয় বা প্রথাগত ক্ষমতার গণ্ডি নয়, বরং জনগণের কল্যাণকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
সম্পর্কিত খবর:
-
[নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি কে? – ৫ নভেম্বর ২০২৫]
-
[মামদানির মা মীরা নায়ার ও তার বাংলা সংযোগ – ২৭ জুন ২০২৫]
উপসংহার:
নিউ ইয়র্ক সিটির ইতিহাসে জোহরান মামদানির বিজয় শুধু একটি নির্বাচনী সাফল্য নয়, বরং প্রজন্মান্তরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের এক প্রতীক। এখন বিশ্ব তাকিয়ে আছে—এই তরুণ মেয়র তার আদর্শের বাস্তব রূপ দিতে পারেন কি না।

