প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫ | ঢাকা
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ আন্দোলনরত আটটি রাজনৈতিক দল। দলগুলোর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, নভেম্বর মাসের মধ্যেই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও গণভোট আয়োজন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল–পূর্ববর্তী সমাবেশে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন,
“সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছে। ফেব্রুয়ারি কাছাকাছি চলে এসেছে, কিন্তু গণভোটের তারিখ ঘোষণা হচ্ছে না। নির্বাচনের আগে গণভোট দিতে হবে। সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে, আঙুল বাঁকা করব।”
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেও গণভোটে আইনি বাধা নেই। “এ বিষয়ে সময়ক্ষেপণ অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলবে, নতুন পথ বেরিয়ে আসবে,”—বলেন তাহের।
আট দলের কর্মসূচি ও দাবি
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করে আট দল। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে দলগুলো আলাদা মিছিল নিয়ে পল্টনে সমবেত হয়।
তাহের বলেন, “জামায়াত নির্বাচন, সমাধান, শান্তি ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চায়। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সরকারও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে, এখন সরকারকে বাস্তব ভূমিকা নিতে হবে।”
তিনি জানান, আলোচনা শুরুর জন্য জামায়াত ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে এবং অন্য দলগুলোও যেন আলোচনা কমিটি করে সে আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আজ সকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কল করেও পাইনি, আবারও যোগাযোগের চেষ্টা করব।”
“টেলিভিশনে ওয়াদা দিতে হবে ভোট ডাকাতি হবে না”
তাহের বলেন, “জাতি চায় বড় দলগুলো বসে ঠিক করুক নির্বাচন কীভাবে হবে। সবাই টেলিভিশনে ঘোষণা দিক—ভোট ডাকাতি হবে না। কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হলে সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করতে হবে।”
তিনি প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সেটি বাতিল করে নতুন করে নির্বাচন দিতে হবে। জনগণ আর প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না। তেমন হলে শেখ হাসিনার আমল ফিরে আসবে।”
আলোচনায় ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, “গণভোট নির্বাচনের সঙ্গে একসঙ্গে তফসিল হবে না। যেদিনই নির্বাচন হোক, গণভোট আগে দিতে হবে। সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়।”
সমাবেশ পরিচালনা করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। বক্তব্য দেন তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী (বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস), আহমদ আলী কাসেমী (খেলাফত মজলিস), ইউসুফ সাদিক হক্কানী (বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন), মুসা বিন ইযহার (বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি), ও রাশেদ প্রধান (জাগপা) প্রমুখ।
মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান
সমাবেশ শেষে দুপুর ১২টার দিকে পল্টন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলে দেওয়া হয় স্লোগান—
“সংস্কার ছাড়া নির্বাচন, মানি না মানব না”,
“জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, দিতে হবে দিয়ে দাও”,
“নভেম্বরে গণভোট, দিতে হবে দিয়ে দাও।”
মিছিলটি মৎস্য ভবন এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়। পরে আট দলের নয়জন নেতা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।
স্মারকলিপি প্রদানকারীদের মধ্যে ছিলেন— মিয়া গোলাম পরওয়ার, হামিদুর রহমান আযাদ, গাজী আতাউর রহমান, এনামুল হক মূসা, আহমদ আলী কাসেমী, ইউসুফ সাদিক হক্কানী, মুসা বিন ইযহার, রাশেদ প্রধান ও একেএম আনোয়ারুল ইসলাম।
📌 শেষ কথা:
জামায়াত ও সহযোগী দলগুলো স্পষ্ট করে জানিয়েছে—নির্বাচনের আগে গণভোট না হলে তারা আন্দোলনের নতুন ধাপে যাবে। ১১ নভেম্বর ঢাকাকে “জনতার নগরী” বানানোর ঘোষণা দিয়ে তারা সরকারের প্রতি সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

