সরকারি মালিকানাধীন জ্বালানি তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে অভিনব জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। একটি ট্যাংকলরির প্রকৃত ধারণক্ষমতা গোপন করে ভুয়া সনদপত্রের মাধ্যমে চুক্তি করার মাধ্যমে তেল ‘চুরির চেষ্টা’ চালানো হয়।
ঘটনাটি কীভাবে ধরা পড়ে
খুলনার দৌলতপুর ডিপো থেকে বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে তেল পরিবহনের জন্য গত ২৭ জুলাই মেসার্স আছিয়া এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তি হয়।
-
চুক্তিতে ট্যাংকলরিটির ধারণক্ষমতা ৯ হাজার লিটার দেখানো হয়।
-
বাস্তবে এর ধারণক্ষমতা সাড়ে ১৩ হাজার লিটার।
-
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ অসামঞ্জস্যতা টের পেয়ে ডিজেল গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়।
জাল সনদপত্রের ব্যবহার
যমুনা অয়েল কোম্পানির নথি অনুযায়ী, লরিটির ক্যালিব্রেশন সনদ বিএসটিআই খুলনা কার্যালয় থেকে নেওয়া হয়েছে।
-
সনদে স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন হুসাইন আসলে জানুয়ারি মাসে ঢাকায় বদলি হয়েছেন।
-
অর্থাৎ তাঁর স্বাক্ষর দেখানো সনদটি ভুয়া।
-
সনদের কিউআর কোড স্ক্যান করলে অন্য একটি গাড়ির তথ্য পাওয়া যায়, যা আছিয়া এন্টারপ্রাইজের আরেকটি লরি।
সংশ্লিষ্ট পক্ষের বক্তব্য
-
আছিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক মানিক শেখ দাবি করেন, ভুলবশত বেশি ধারণক্ষমতার লরি দিয়ে কম পরিমাণ তেল পরিবহনের চুক্তি করেছিলেন।
-
তবে আপত্তির পর তিনি চুক্তি প্রত্যাহার করেছেন এবং জামানত ফেরতের আবেদন করেছেন।
-
পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ট্যাংকলরি শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, “সাড়ে ১৩ হাজার লিটারের লরি জালিয়াতি করে ৯ হাজার লিটার দেখানো হয়েছে—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
যমুনা অয়েলের ভূমিকা ও প্রশ্ন
যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তফা কুদরত-ই ইলাহী বলেন,
“বাস্তব ধারণক্ষমতা ও সনদের তারতম্যের কারণে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। চুক্তির আগেই বিষয়টি যাচাই করার কথা ছিল। কীভাবে এটি ঘটল, তা তদন্ত করে দেখা হবে।”
তবে যমুনার নথিতে চুক্তি বাতিলের তারিখ ও বাস্তবে লরি তেল পরিবহনের তারিখ নিয়ে অসঙ্গতি রয়েছে।
-
প্রথমে ৩ আগস্টে চুক্তি বাতিলের চিঠি দেখানো হলেও ১৭ আগস্ট পর্যন্ত লরিটি তেল পরিবহন করেছে।
-
পরে তড়িঘড়ি করে নতুন করে ১৮ আগস্ট তারিখে আরেকটি বাতিলপত্র ইস্যু করা হয়।
জ্বালানি খাতে পুরনো ‘চুরির কৌশল’
যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ট্যাংকলরির অতিরিক্ত ধারণক্ষমতা গোপন করে লরিতে বাড়তি তেল ভরা হয়। পরে সেই তেল কারিগরি ক্ষতি হিসেবে দেখানো হয়। তাঁদের দাবি, এই ঘটনা নতুন নয়—বরং দীর্ঘদিন ধরেই ডিপোর বাইরে এভাবে তেল চুরির ঘটনা ঘটছে।