প্রকাশের তারিখ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ঢাকা: উপসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব ও পাকিস্তান ১৭ সেপ্টেম্বর (বুধবার) একটি “কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি” (Strategic Mutual Defense Agreement – SMDA) স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে উঠে আসছে।
চুক্তির সারাংশ
-
সৌদি আরবের অর্থশক্তি ও পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতার (বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তি) সম্ভাব্য সমন্বয় ঘটবে।
-
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ দাবি করেছেন, চুক্তিতে পারমাণবিক অস্ত্র–সম্পর্কিত কোনো ধারা নেই; শুধু প্রচলিত সামরিক সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত।
-
রিয়াদ ইঙ্গিত দিচ্ছে, এই চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব কার্যত একটি পারমাণবিক সুরক্ষা বলয়ের নিচে এসেছে।
-
সৌদি আরব বলেছে, “চুক্তির লক্ষ্য প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা ও আক্রমণ প্রতিহত করার সক্ষমতা বাড়ানো।”
আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া ও শঙ্কা
-
ইসরায়েল, যা ধারণা করা হয় পারমাণবিক অস্ত্রধর একমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশ, এ চুক্তিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
-
ভারত ও ইরান উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে। ভারত বলেছে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর এর প্রভাব তারা মূল্যায়ন করছে।
-
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ছাতার ওপর সৌদি আরবের নির্ভরশীলতা কমার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
-
লন্ডনভিত্তিক IISS-এর জ্যেষ্ঠ ফেলো হাসান আল হাসান বলেন, “ইসরায়েলের তুলনায় সক্ষমতায় পিছিয়ে থাকা সৌদি আরব এ চুক্তির মাধ্যমে কৌশলগত শূন্যতা পূরণ করতে চাইছে।”
-
পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধি মনে করেন, ইসলামাবাদ মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে; তবে অঞ্চলটি অত্যন্ত অস্থির ও সংঘাতপ্রবণ।
-
পাকিস্তানের সিনেটের প্রতিরক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মুশাহিদ হুসেইন বলেন, “উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছে পাকিস্তান এখন নতুন কৌশলগত বিকল্প।”
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
-
সৌদি আরব ঘোষণা দিয়েছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করলে তারাও করবে।
-
পাকিস্তান বহু বছর ধরে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সহায়তা পাচ্ছে; সর্বশেষ রিয়াদ ইসলামাবাদকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে।
-
পাকিস্তানের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের পাশাপাশি ইসরায়েলের ভেতরেও আঘাত হানতে সক্ষম বলে ধারণা করা হয়। তবে ইসলামাবাদ বলছে, এসব অস্ত্র কেবল ভারতের জন্যই তৈরি।
উপসংহার
রিয়াদ-ইসলামাবাদ প্রতিরক্ষা চুক্তি শুধু সৌদি আরব ও পাকিস্তানের জন্য নয়, বরং গোটা উপসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ এশিয়া এবং বৈশ্বিক ভূরাজনীতির জন্য নতুন হিসাব-নিকাশ তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ভারত ও ইরান—সব পক্ষই এ চুক্তির প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করছে।
👉 প্রবাসী পাঠকের জন্য আরও আন্তর্জাতিক সংবাদ পেতে সঙ্গে থাকুন [প্রবাস বুলেটিন]।