প্রকাশের তারিখ: শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জরিপের মাধ্যমে মনোনয়নপ্রার্থী বাছাই শুরু করেছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় দলীয় গঠনতন্ত্র উপেক্ষিত হওয়ায় তৃণমূল নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় নেতারা আশঙ্কা করছেন, তৃণমূলের মতামত বাদ দিলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বাড়বে এবং নির্বাচনের আগেই দল দুর্বল হয়ে পড়বে।
গঠনতন্ত্র ও আইনি বাধ্যবাধকতা
বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সংসদীয় বোর্ড হিসেবে স্থায়ী কমিটিকে অবশ্যই ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, থানা বা জেলা কমিটির গঠিত প্যানেল থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনীত করতে হবে। এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০বি (৪) ধারায়ও সংসদীয় প্রার্থীদের মনোনয়নে তৃণমূলের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু বর্তমান প্রক্রিয়ায় সেটি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দলীয় নেতারা।
তৃণমূলের ক্ষোভ ও আশঙ্কা
মানিকগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়নপ্রার্থী এসএ জিন্নাহ কবির বলেন, অতীতে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের মতামত নেওয়া হতো, কিন্তু এবার জরিপের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত হচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুরের নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ও তৃণমূলকে উপেক্ষা করলে ফল মারাত্মক হতে পারে।
সিলেট-৩ আসনের প্রার্থীপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীও বলেন, জরিপ হচ্ছে শুনেছেন, কিন্তু এর প্রক্রিয়া ও ফলাফল সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
কেন্দ্রীয় অবস্থান
কুষ্টিয়ার মনোনয়নপ্রার্থী জাকির হোসেন সরকার সতর্ক করে বলেছেন, “হাইব্রিড” প্রার্থী ঢুকলে তৃণমূল মেনে নেবে না। তবে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমিনুর রশিদ ইয়াসিন এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জরিপভিত্তিক প্রক্রিয়ার পক্ষে যুক্তি দেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একাধিক দিক থেকে জরিপ করা হচ্ছে, যা পেশাদার প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত। তিনি দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মানা হবে এবং এখনো সমন্বয়ের সময় আছে।
বিশ্লেষকদের সতর্কবার্তা
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো. আব্দুল আলিম মনে করেন, তৃণমূলকে বাদ দিয়ে কেন্দ্র থেকে প্রার্থী নির্বাচিত হলে দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, “জরিপ প্রক্রিয়াটি লন্ডনভিত্তিক মনে হচ্ছে। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়ছে।” তিনি সতর্ক করে দেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে তা বিএনপির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সারসংক্ষেপ
বিএনপির জরিপভিত্তিক প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে দলের ভেতরে অসন্তোষ বাড়ছে। গঠনতন্ত্র উপেক্ষা ও তৃণমূলকে বাদ দেওয়ার অভিযোগে প্রশ্ন উঠছে দলের গণতান্ত্রিক চর্চা নিয়ে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে এ ধরনের বিভাজন বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।