প্রকাশিত: সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছে দলটি। তবে একই দিনে জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বৈঠক শেষে হতাশার সুর শোনা গেছে।
রোববার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সরকারি বাসভবন যমুনায় ধারাবাহিকভাবে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে খলিলুর রহমানের অনুপস্থিতি
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের অনুপস্থিতি রাজনৈতিক মহলে দৃষ্টি কাড়ে। তিনি জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধিদলে ছিলেন। বিএনপিতে তার ভূমিকা নিয়ে আগেই চাপা অসন্তোষ ছিল বলে জানা গেছে। সরকারের নিরপেক্ষতার বিষয়ে বিএনপিকে আশ্বস্ত করতেই খলিলকে বৈঠকে না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। তার পরিবর্তে বিএনপির বৈঠকে অংশ নেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন—
“নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেউ যদি নির্বাচনের বিকল্প নিয়ে ভাবে, সেটা জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক হবে।”
সূত্র জানায়, বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস জাতীয় নির্বাচন যেকোনো মূল্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে আয়োজনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তিনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের কথাও তুলে ধরেন। বিএনপি এতে একমত হয়ে সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
জামায়াত ও এনসিপির হতাশা
জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মো. তাহের বৈঠক শেষে বলেন—
“প্রধান উপদেষ্টা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন, আমরা একমত। তবে দেশ কি নীলনকশার নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে না—এ প্রশ্ন জনমনে রয়েছে। লন্ডনে একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নজিরবিহীন ঘটনা, এতে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।”
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন—
“জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তির জন্য আগামী নির্বাচন যেন গণপরিষদ নির্বাচন হয়।”
তবে সূত্র জানায়, অধ্যাপক ইউনূস এই প্রস্তাব এড়িয়ে গিয়ে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের ওপর জোর দেন।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদ আলম ভূঁইয়া বলেন—
“আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক, ছাত্রদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ বাড়ছে। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান হলেও ইউনূস এখন অনেকটা একা। হয়তো নিজের নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করতে বিএনপির সঙ্গে অ্যালায়েন্স করে দ্রুত নির্বাচন দিতে চাইছেন। আজকের বৈঠক থেকে বোঝা যাচ্ছে, এনসিপিকে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না, আর জামায়াতের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ছে।”
🔎 সংক্ষেপে
-
বিএনপি বৈঠকে সন্তুষ্ট, জামায়াত-এনসিপি হতাশ।
-
বিএনপির বৈঠকে খলিলুর রহমানের অনুপস্থিতি আলোচনায়।
-
প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অনড়।
-
বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে ইউনূস দ্রুত নির্বাচনের পথে।