কৌশলের পরিবর্তন, দুই হাত দিয়ে কান ঢেকে আর্তচিৎকার, নিজের নাক নিজেই খামচি দেওয়াসহ অনেক কিছুই এ মৌসুমে দেখা গেছে পেপ গার্দিওলার কাছ থেকে। কিন্তু লাভের লাভ শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করেও ম্যানচেস্টার সিটির ব্যর্থতার কোনো সুরাহাই করতে পারেননি গার্দিওলা। শেষ পর্যন্ত সেই পরিচিত ও চেনা পথেই হাঁটতে হচ্ছে তাঁকে। বিপুল অর্থ খরচ করে ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছেন সিটি কোচ।
গার্দিওলার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে তারকা কিনে দল সাজানোর অভিযোগটা পুরোনো। স্প্যানিশ কোচের খরচের খাতার দিকে তাকালে এ অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতোও নয়। ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সিটিতে কোচ হয়ে আসার পর এখন পর্যন্ত ৫২ জন ফুটবলারের পেছনে গার্দিওলা খরচ করেছেন ১৪১ কোটি ২৭ লাখ পাউন্ড। কাছাকাছি সময়ে লিভারপুলের কোচ হিসেবে কাজ করা ইয়ুর্গেন ক্লপের সঙ্গে তুলনা করলে গার্দিওলার অতিরিক্ত খরচের বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।
প্রায় একই সময়ে ৩১ জন খেলোয়াড়ের পেছনে ক্লপ খরচ করেছেন ৮০ কোটি পাউন্ড। অর্থাৎ ক্লপের চেয়ে প্রায় ৬০ কোটি ইউরো বেশি খরচ করেছেন গার্দিওলা। কিন্তু সেই খরচের বহর নিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন ওঠেনি তাঁর বিপুল সাফল্যে। গার্দিওলার হাত ধরে ইংল্যান্ডে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে টানা চারবারের লিগ চ্যাম্পিয়ন সিটি। এমনকি এর মধ্যে ‘ট্রেবল’ জেতার অনন্য কীর্তিও করে দেখিয়েছে তারা।
কিন্তু চলতি মৌসুমে এসে গার্দিওলার সব জাদুই যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। নতুন-পুরোনো কোনো মন্ত্রই ঠিকঠাক আর ফল এনে দিতে পারছে না। যার ফলাফলস্বরূপ টানা চার লিগ শিরোপা জেতা দলটির এবার মাঝমৌসুমেই শিরোপা হারানো প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল। আর চ্যাম্পিয়নস লিগে এখন তারা দাঁড়িয়ে আছে খাদের কিনারায়। শেষ ম্যাচে জিততে না পারলে বিদায় নিতে হবে লিগ পর্ব থেকেই।
এমন পরিস্থিতিতে গার্দিওলা নিজের ভাগ্য বদলের আশায় আশ্রয় নিলেন সেই অর্থের ছায়াতলেই। শীতকালীন দলবদলে এখন পর্যন্ত তিনজন খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়েছেন গার্দিওলা। এবারের দলবদলে সিটি ৩ কোটি ৩৫ লাখ পাউন্ড খরচ করে লাঁস থেকে এনেছে আবদুকোদির খুসানভকে, পালমেইরাস থেকে ২ কোটি ৯৬ লাখ পাউন্ড খরচ করে এনেছেন ভিটর রেইসকে। আর আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ওমর মারমুশকে আনতে সিটি খরচ করেছে ৫ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ডের মতো। অর্থাৎ এই তিনজনের সম্মিলিত দাম প্রায় ১২ কোটি ২১ লাখ পাউন্ড।
সিটির এই খরচের বিপরীতে গতকাল পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের বাকি ১৯ দলের সম্মিলিত খরচ হচ্ছে ৯ কোটি ১ লাখ পাউন্ড। এর অর্থ সিটি এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের বাকি ১৯ দলের চেয়ে প্রায় ৩ কোটি পাউন্ড বেশি খরচ করেছে। সিটি ছাড়া প্রিমিয়ার লিগের অন্য শীর্ষ দলগুলোর মধ্যে লিভারপুল ও আর্সেনাল এখন পর্যন্ত নতুন খেলোয়াড় দলে টানেনি।
চেলসি তিনজন খেলোয়াড়কে দলে এনেছে, কিন্তু সবাই এসেছেন ধারে। একইভাবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও একমাত্র খেলোয়াড়টিকে এনেছে ধারে। টটেনহাম টাকা খরচ করে একজন খেলোয়াড়ই কিনেছে। ১ কোটি ২৫ লাখ পাউন্ড খরচ করে আন্তোনিন কিনস্কাইকে কিনেছে তারা।
সব মিলিয়ে গার্দিওলা নিজেদের ভাগ্য বদলের লক্ষ্যে পাখির চোখ করেছেন জানুয়ারির দলবদলকে। অর্থাৎ টাকা খরচের সেই পুরোনো পথে হেঁটেই ভাগ্যকে সুপথে ফেরানোর চেষ্টা করছেন এই স্প্যানিশ কোচ। গার্দিওলার এই কৌশল এখন সিটির মৌসুম বাঁচাতে পারবে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।