মুশফিকুর রহিম – তিনি কি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার? অবশ্যই নয়। তবে কি বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার? তাও তো নয়। তাহলে তাঁর পরিচয় কি, মুশফিকের সবচেয়ে বড় পরিচয় বোধহয় তাঁর নিবেদন। চোখ বন্ধ করে বলা যায় এই দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে সবচেয়ে নিবেদিত প্রাণ এই তারকা। তিনি শিখিয়ে গেছেন — প্রতিভা আপনাকে উপহার দেওয়া হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত সফলতা আসে শুধু একাগ্রতা আর পরিশ্রমে। তবে, যথাসময়ে ক্যারিয়ারটা ছেড়ে দেওয়াও জানতে হয়!
দীর্ঘ দুই দশকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মুশফিক নিজেকে কখনো প্রতিভার বিস্ফোরণে নয়, বরং কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেই নিবেদনের এক অধ্যায়ের ইতি ঘটল এবার।
নিবেদনটা এবার শেষ হয়ে গেল ওয়ানডে ক্রিকেটে। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, আর নয় ৫০ ওভারের ক্রিকেট। আর নয় সমালোচনার ঝড়। এবার বাংলাদেশ ৫০ ওভারের ক্রিকেটের পরিকল্পনা সাজাতে পারে মুশফিকুর রহিমকে ছাড়াই।
সমালোচনা ছিল চারপাশে। ভোরবেলা রোজ উঠে তিনি অনুশীলনে আসেন। সেই অনুশীলনটা আর কাজে আসছিল না ওয়ানডে ক্রিকেটে। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দুই ইনিংসে করেছেন মাত্র দুই রান। একটা তার মধ্যে ডাক। মুশফিকের অবসরের ঘোষণাটা এই দুই ম্যাচ আগে আসলে বড় কোনো ক্ষতি হত না। কিন্তু, কি আর করা! বাংলাদেশ দলকে চূড়ান্ত বিপদে ফেলেই তিনি বিদায় নিলেন।
২৭৪ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে ৭৭৯৫ রান করেছেন, সেঞ্চুরি করেছেন নয়টা। হাফ সেঞ্চুরির ফিফটি হতে একটা ইনিংস দূরে ছিলেন। সেই সুযোগ বিসিবি দিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু, মুশফিক আর সেদিকে হাঁটলেন না। এখন তাঁর মনোযোগ কেবলই টেস্ট ক্রিকেটে। ওয়ানডে ক্রিকেটে নীরব সাধনার অবসান হল অবশেষে!
দলের জন্য অবদান রেখে গেছেন নি:শব্দে, পারফরম করেছেন বটে – তবে সাকিব কিংবা তামিমের মত দলের সেরা তারকা ছিল না কোনোদিনও। এবার সেই নীরব সাধনার শেষ অধ্যায়টুকুও শেষ হয়ে গেল। টেস্ট ক্রিকেটেই এখন তার সমস্ত নিবেদন।
একটা ফরম্যাট থেকে মুশফিক বিদায় নিলেন ঠিকই, তবে ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা, ত্যাগ আর অবিচল সংগ্রাম চিরকাল অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি শিখিয়ে গেছেন — প্রতিভা আপনাকে উপহার দেওয়া হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত সফলতা আসে শুধু একাগ্রতা আর পরিশ্রমে। তবে, যথাসময়ে ক্যারিয়ারটা ছেড়ে দেওয়াও জানতে হয়!