মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের মাধ্যমে একটি নতুন বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করেছেন, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। ২ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের বাণিজ্যিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যাতে তারা এই নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে। এই শুল্ক যুদ্ধের মূল লক্ষ্য চীন এবং এর প্রভাব বিশ্বের অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির ওপরও পড়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU)
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপকে ‘বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন। তিনি বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং ট্রাম্পের শুল্ক নীতি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত। ইতিমধ্যে, ইউরোপ ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা চলতি মাসে কার্যকর হওয়ার কথা। ইউরোপের নেতারা মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে আলোচনা চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে রয়েছেন।
চীন
চীন ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পাল্টা শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১০ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এর পাশাপাশি, চীন মার্কিন পণ্যের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি, ১৬টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (WTO) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
যুক্তরাজ্য
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের জবাবে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য শুল্ক-ঝড় থেকে নিজেদের বাঁচাতে নতুন শিল্পনীতি গ্রহণ করবে। যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে অবস্থা গ্রহণ করেছে, এবং তাদের ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করবে। জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার যেমন তাদের গাড়ি রপ্তানি স্থগিত রেখেছে, তেমনি ব্রিটেনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও আমেরিকার শুল্ক নীতির প্রভাব মোকাবিলা করছে।
ভারত
ভারত, যা আগে থেকেই শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিল, তারা ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক থেকে বাঁচতে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুল্ক হ্রাস এবং মার্কিন পণ্যে সুবিধা দিতে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের শুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য কূটনীতি আগেভাগে প্রস্তুত হওয়ার ফলে ভারত এখন শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
ভিয়েতনাম
ভিয়েতনামও মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তারা শুল্ক শূন্যতায় পৌঁছানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। ভিয়েতনাম সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, তারা মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে আনার জন্য শর্তসাপেক্ষে একটি চুক্তি করার চেষ্টা করছে।
ইলন মাস্কের প্রস্তাব
এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা বাণিজ্যিক বাধাগুলি দূর করতে সাহায্য করবে। মাস্কের এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করার দিকেও নজর দেয়।
বিশ্বের প্রধান অর্থনীতি গুলোর এই শুল্ক যুদ্ধ বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে এই শুল্ক নীতির ফলে দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে জোর দিচ্ছে এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের পথেও হাঁটছে। বিভিন্ন দেশ তাদের শুল্ক নীতি পুনর্বিবেচনা করছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে।
এভাবে, ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোকেও অর্থনৈতিক কৌশলে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার সুযোগ দিচ্ছে। তবে এটি বৈশ্বিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।