সোমবার, ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যখন নানা অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জ, তখন রাজধানীতে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫’ নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে। চার দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার, যেখানে বিশ্বের ৫০টি দেশ থেকে প্রায় ৫৫০ জন বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছেন।

সম্মেলনের তৃতীয় দিনে কথা বলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে ব্যবসায়ীরা বিশ্বকে বদলে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেদের যুক্ত করতে পারেন।”

উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি ও অংশগ্রহণ
সম্মেলনে চারটি দেশি প্রতিষ্ঠান—বিকাশ লিমিটেড, ফেব্রিক লাগবে লিমিটেড, ওয়ালটনস্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-কে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

এছাড়া কোরিয়ার ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং-কে বাংলাদেশে ৪৫ বছর ধরে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনার স্বীকৃতি হিসেবে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। তাঁর প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৭০ হাজার কর্মী কর্মরত, যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ইতিবাচক উদাহরণ।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আশ্বস্ততা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বরাবরই ছিল। তাই এবার উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এরা সম্মেলনে নিজেদের বিনিয়োগবান্ধব অবস্থান তুলে ধরেন।

বিডা (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন ও নীতি স্থায়িত্বে সব দল একমত হয়েছে। তিনটি দলের সঙ্গেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাক্ষাৎ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সমস্যার চিত্র ও বাস্তবতা
বিনিয়োগকারীরা আশাবাদ প্রকাশ করলেও কিছু গুরুতর বাধার কথাও তুলে ধরেন। যেমন—

  • সরকারি সেবার মানের ঘাটতি

  • ইউটিলিটি সংযোগে জটিলতা

  • দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জট

  • নীতি ও নীতির ধারাবাহিকতার অভাব

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (BSEZ) পরিদর্শনের সময় বিনিয়োগকারীরা এসব সমস্যা নিরসনে সরকারের সুস্পষ্ট পদক্ষেপ কামনা করেন।

অতীত অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের আশা
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান স্বীকার করেন, “একটি সম্মেলনের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে—এটা বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা নয়। তবে অতীতের নেতিবাচক ধারণা ভাঙতে এই আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—বিনিয়োগের পথে যে সমস্যাগুলো বারবার উঠে আসে, সেগুলোর সমাধান কবে? বিশেষ করে অবকাঠামোগত ঘাটতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ, এবং বিনিয়োগবান্ধব নীতির দীর্ঘমেয়াদি নিশ্চয়তা নিশ্চিত না হলে কেবল সম্মেলন আয়োজন দিয়ে বড় অগ্রগতি হবে না।

একসময় ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার, যার অল্প কয়েকটি বাস্তবে উৎপাদনে যেতে পেরেছে। বাকি অঞ্চলগুলো সচল করা, বিদ্যুৎ-গ্যাসের নিশ্চয়তা দেওয়া এবং আমলাতন্ত্রের জট কমিয়ে প্রকৃত উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ গড়াই এখন জরুরি।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version