মঙ্গলবার, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অর্থনৈতিক মন্দা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংকঋণের চড়া সুদের মধ্যে নতুন করে বিনিয়োগকারীদের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে এল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। রোববার (১৪ এপ্রিল) সংস্থাটি নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি আরও দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা।

বিইআরসি জানায়, নতুন গ্যাস-সংযোগপ্রাপ্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের জন্য ৪০ টাকা গুনতে হবে, যা আগে ছিল ৩০ টাকা। অন্যদিকে ক্যাপটিভ পাওয়ার (নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন) খাতে এই হার বেড়ে হয়েছে ৪২ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৩১.৫০ টাকা। ১৩ এপ্রিলের পর থেকে অনুমোদিত সংযোগে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে এ নতুন হার কার্যকর হবে।

বৈষম্যের অভিযোগ

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, “একই খাতে পুরনো কারখানাগুলো গ্যাস পাচ্ছে কম দামে, নতুনরা পাচ্ছে বেশি দামে। এটি একটি স্পষ্ট বৈষম্য।” তিনি আরও বলেন, “নীতির ধারাবাহিকতা না থাকায় নতুন উদ্যোক্তারা ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছেন। বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিচ্ছেন দেশি ও বিদেশি উভয় উদ্যোক্তা।”

বিনিয়োগ প্রবণতা নিম্নমুখী

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ২১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরে একই সময়ে এসেছিল ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমে দাঁড়িয়েছে ৬.৮২ শতাংশ, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এদিকে ব্যাংকঋণের সুদহার বর্তমানে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ডলার সংকট এবং মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে বাধা বিনিয়োগে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ব্যাংক ইতিমধ্যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে নতুন প্রকল্প ঋণ বন্ধ বা স্থগিত করেছে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, কিন্তু সরবরাহে উন্নতি নেই

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, দাম বাড়লেও সরবরাহ ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন হয়নি। ব্যবসায়ীদের ওপর বাড়তি চাপ দেওয়া হলেও গ্যাস চুরি ও অপচয় ঠেকানো যায়নি।

বিইআরসির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কারিগরি ক্ষতির নামে ১৩৭ কোটি ঘনমিটার গ্যাস অপচয় হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০,৮৭০ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কারিগরি ক্ষতির গ্রহণযোগ্য সীমা ০.২% হলেও বাংলাদেশে তা প্রায় ৩%।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, “একই শিল্পে ভিন্ন দামে গ্যাস সরবরাহ করার মাধ্যমে সরকার বৈষম্য তৈরি করছে, যা প্রতিযোগিতায় নতুন উদ্যোক্তাদের পিছিয়ে দেবে।”

ভবিষ্যতের শঙ্কা

বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে বৈষম্যমূলক নীতিনির্ধারণ বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও সংকুচিত করবে। এতে করে কর্মসংস্থান কমবে, আয় কমবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সরকারের উদ্দেশ্য সরবরাহ উন্নয়ন হলেও বাস্তবে তার প্রভাব আরও নেতিবাচক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version