মঙ্গলবার, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ২০ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার

যুক্তরাষ্ট্রের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকারে বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সেই নীতি এখন উল্টো দিকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে ডলারের ওপর দীর্ঘমেয়াদি আস্থার ভাটা পড়ছে। শক্তিশালী ডলারের বদলে দেখা দিচ্ছে অবমূল্যায়নের সংকট।

ডলারের পতন: পরিসংখ্যানে উদ্বেগ

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিল বিশ্ববাজারে ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান দাঁড়ায় ৯৯.২৩, যেখানে জানুয়ারিতে তা ছিল ১১০। অর্থাৎ চার মাসে ডলার ইনডেক্সের পতন হয়েছে ৯.৩১ শতাংশ। ১১ এপ্রিল সূচক ১০০-এর নিচে নেমে যায়, যা ২০২৩ সালের জুলাইয়ের পর প্রথম।

এপ্রিলের শুরু থেকেই ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড ও জাপানি ইয়েনের তুলনায় ডলার ৫-৬ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২ এপ্রিল ট্রাম্পের নতুন পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর থেকেই ডলার দ্রুত শক্তি হারাতে শুরু করে।

আস্থাহীনতায় বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরাচ্ছেন ডলার থেকে

ডলার দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মুদ্রা ও বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। মার্কিন ট্রেজারি বন্ড, যা সাধারণত ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’ হিসেবে পরিচিত, তার চাহিদাও পড়তে শুরু করেছে। এতে সুদহার বাড়াতে হচ্ছে মার্কিন কর্তৃপক্ষকে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ট্রাম্পের বেপরোয়া শুল্কনীতি ও বিশ্ব বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শৃঙ্খলাবিনাশী আচরণ বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা, মন্দার আশঙ্কা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঋণনীতি এই আস্থার ঘাটতির প্রধান কারণ।

বাংলাদেশ-ভারতসহ এশিয়ায় প্রভাব সীমিত হলেও লক্ষণ স্পষ্ট

বাংলাদেশে ডলারের বিনিময় হার এখনো নিয়ন্ত্রিত থাকায় বিশ্ববাজারে দরপতনের সরাসরি প্রভাব তেমন পড়েনি। তবে বাজারমুখীনীতির কারণে ভবিষ্যতে এ প্রভাব অনুভূত হতে পারে। ভারতের বাজারেও ডলারের বিপরীতে রুপির মান সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে, যা ডলারের দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।

ডলারভিত্তিক আধিপত্যের পতনের ইঙ্গিত

বিশ্বব্যাপী ডলারনির্ভরতা কমাতে ইতোমধ্যেই উদ্যোগ নিচ্ছে বহু দেশ। চীন ইউয়ানে বাণিজ্যের ওপর জোর দিচ্ছে, ভারত ও ব্রাজিলসহ একাধিক দেশ বিকল্প মুদ্রা ব্যবস্থায় আগ্রহ দেখাচ্ছে।

মার্কিন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ জেফ্রি স্যাক্স সম্প্রতি মন্তব্য করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত ডিজিটাল মুদ্রা চালু হলে SWIFT-এর মতো আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। ফলে ডলারের নিয়ন্ত্রণও কমে আসবে।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা: ‘ডলারে আস্থা হারানো মানে বিশ্বব্যবস্থায় পরিবর্তন’

যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের অর্থনীতিবিদ বেন স্টিল বলেন, “ডলার শক্তিশালী থাকার কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ ঋণ ঘাটতি টিকে আছে। একবার যদি বিশ্ব এই মুদ্রায় আস্থা হারায়, মার্কিন অর্থনীতি বড় ধাক্কা খাবে।”

তাঁর মতে, ট্রাম্পের নীতিই আজ ডলারের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যতকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ও জে পি মরগান ইতোমধ্যে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।


উপসংহার: শুল্ক নীতি বুমেরাং হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য

বিশ্ব বাণিজ্যে মার্কিন অংশগ্রহণ কমে গেলে ডলারের চাহিদা আরও হ্রাস পাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বিকল্প না থাকলেও ভবিষ্যৎ বিশ্বব্যবস্থা দ্রুত পরিবর্তন হতে চলেছে—এমনটিই ইঙ্গিত দিচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি।

ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্তে বিশ্ব অর্থনীতির ভারসাম্য কোন দিকে গড়াবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আস্থার এই স্খলন তার প্রশাসনের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version