কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে বাড়ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্রকে এখন অত্যন্ত জটিল এক কূটনৈতিক সমীকরণ সামলাতে হচ্ছে।
এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, একদিকে ভারতকে সমর্থন দেওয়া এবং অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তবিতর্কের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি কঠিন ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যায় এবং সামরিক সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়। এই উত্তেজনা শুধু আঞ্চলিক নয়, বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী।
যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতকে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা জানাই এবং ভারতকে সমর্থন জানাই।” তবে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ নেবে না এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
হামলার পর, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ভারত সফরে ছিলেন, যেখানে তিনি ভারতের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অংশীদারত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন। ভারতে অবস্থানরত ভ্যান্সের উপস্থিতি উত্পাদনশীল কূটনৈতিক আলোচনা নিশ্চিত করেছে, বিশেষ করে যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারত সম্পর্ক এখন আরও গভীর হচ্ছে, বিশেষ করে সামরিক সহযোগিতা, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার ক্ষেত্রে। ফেব্রুয়ারিতে ‘যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কমপ্যাক্ট’ উদ্যোগ চালু করা হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা বাড়ছে, তাই ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হিসেবে আরও প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে।
এদিকে, পাকিস্তান চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে সক্রিয় হয়েছে এবং ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলী জারদারি চীন সফর করেছেন। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC) প্রকল্পের অগ্রগতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি স্পর্শকাতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ একদিকে ভারতকে সমর্থন জানাতে হবে, অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে সংযমের আহ্বানও রাখতে হবে। দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়ায়, সামান্য ভুল পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির মাধ্যমে এই সংকট নিরসনে চেষ্টা করবে, যাতে সহিংসতা বৃদ্ধি না পায় এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
এই উত্তেজনার পরিণতি শুধুমাত্র দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যতের জন্যই নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চীনের আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই পরিস্থিতি আরও বেশি স্পর্শকাতর হয়ে দাঁড়িয়েছে।