সোমবার, ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

📍 প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়ায়, বৈঠকে হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

দীর্ঘ এক বছর বন্ধ থাকার পর আবারও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আজ বৃহস্পতিবার পুত্রজায়ায় বৈঠকে বসছে। বৈঠকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এলে আবারও কর্মী পাঠানো শুরু হতে পারে বলে আশা করছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সিনিয়র সচিব নেয়ামত উল্ল্যা ভূঁইয়া এবং উপসচিব মো. সারওয়ার আলম। সফরকালে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

২০২৪ সালের শুরুতে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ ১৪টি দেশের শ্রমবাজার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ থেকেও শ্রমিক পাঠানো স্থগিত হয়। বাজারে চক্র তৈরি ও অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের অভিযোগ ছিল এর অন্যতম কারণ।

সমঝোতা স্মারকের আলোকে কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ

বর্তমানে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকের আওতায় শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। এ স্মারকের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বলবৎ থাকায় নতুন কোনো চুক্তির সুযোগ না থাকলেও কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব দিতে পারে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব রয়েছে—সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং অভিবাসন ব্যয় যথাসম্ভব কম রাখতে হবে। অতীতে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া সুযোগ এবং অতিরিক্ত ব্যয়ের অভিযোগ ছিল বারবার।

আগের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

২০০৪ সাল থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালেই গেছেন সর্বোচ্চ সাড়ে তিন লাখের বেশি। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত গেছেন প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী।

তবে অভিজ্ঞতা বলছে, শ্রমবাজার চালুর পর নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থার কারণে বারবার সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে ২০২২ সালে বাজার চালুর সময় সরকার নির্ধারিত ৭৯ হাজার টাকার পরিবর্তে কর্মীদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি আদায় করা হয়—এমন অভিযোগ উঠে।

বেসরকারি খাতের সুপারিশ ও আশাবাদ

অভিবাসন খাতে কাজ করা ২৩টি বেসরকারি সংগঠন সরকারকে ১০ দফা সুপারিশ জমা দিয়েছে। মূলত অতীতের ভুল না করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় শ্রমবাজার চালুর আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে খরচ কমানো ও সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

রামরুর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, “বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি যেন কোনো গোষ্ঠীর জন্য একচেটিয়া না হয় এবং শ্রমিকদের ব্যয় সীমিত থাকে—তা নিশ্চিত করতে হবে।”

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে কর্মী ও রিক্রুটাররা

আগামী ২১ ও ২২ মে ঢাকায় যৌথ কারিগরি কমিটির সভার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে কর্মী পাঠানোর বিস্তারিত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হতে পারে। শ্রমবাজার চালুর ক্ষেত্রে এখন মূল চ্যালেঞ্জ—সংহত, স্বচ্ছ ও ন্যায্য অভিবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রত্যাশা, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের পুনরায় উদ্বোধন কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিকভাবেও প্রবাসীদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version