📍 ঢাকা, ২৬ মে ২০২৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন সম্ভব। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনগণের ন্যায্য দাবিগুলো মানতেই হবে—এখানে সরকারের কোনো রকমের “রাগ-বিরাগ” কিংবা “মান-অভিমান”ের জায়গা নেই।
রোববার (২৫ মে) ঢাকায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
গঠনমূলক সমালোচনার আহ্বান
তারেক রহমান বলেন, সরকার নির্বাচিত হোক বা অন্তর্বর্তী হোক, জনগণের অধিকার হলো সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা। কারণ, “দেশের মানুষ সরকারের করুণার পাত্র নয়।” রাজনৈতিকভাবে সচেতন নাগরিকদের দায়িত্ব সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে রাখা।
তিনি জানান, শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দলের অবস্থান পুনরায় তুলে ধরা হয়েছে।
অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
দেশে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকার ফলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার ফলে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে প্রতিদিনের রাজপথে—যেখানে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেদের ন্যায্য দাবিতে প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ তাঁদের কথা শোনার কেউ নেই।”
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, বাজেট ঘোষণার ঠিক আগমুহূর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কারের নামে সরকার এক ধরনের চাপিয়ে দেওয়া অচলাবস্থা তৈরি করেছে, যা অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক নীতিমালায় এমন পরিবর্তন বা সংস্কার করতে হলে তা হতে হবে সুপরিকল্পিত এবং জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে।”
সংস্কারের নামে বিভ্রান্তি নয়, বাস্তবায়ন জরুরি
তারেক রহমান সংস্কারকে একটি “ধারাবাহিক প্রক্রিয়া” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “অল্প বা বেশি সংস্কার বলে কিছু নেই। পুথিগত নয়, বাস্তবভিত্তিক প্রগতিশীল সংস্কারই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি মনে করেন, সংস্কারের নামে নানা রকম অগ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নিয়ে সরকারের গড়িমসি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করছে।
সরকারের জবাবদিহিতার ঘাটতি
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক বা নৈতিক দিক থেকে বৈধতা পেতে পারে, কিন্তু তারা জনগণের কাছে সরাসরি জবাবদিহিমূলক নয়। এই বাস্তবতায় সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনসমক্ষে তুলে ধরা অপরিহার্য। জনগণকে অন্ধকারে রেখে, কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চয়তায় রেখে কোনো সংস্কার কার্যকর বা টেকসই হতে পারে না।
উপসংহার
তারেক রহমানের বক্তব্যে স্পষ্ট, বিএনপি একটি নির্বাচনের সময়সূচি চায়, তবে তা হতে হবে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা রাগ বা প্রতিশোধপরায়ণতার বদলে বাস্তববাদী ও জনকল্যাণমুখী সংস্কারের দিকে এগিয়ে আসে।