রবিবার, ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রতিবেদন: তুষার হোসেন | প্রবাস বুলেটিন

নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেওয়া নতুন সময়সূচিকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ একে স্বাগত জানালেও অনেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি ও এর পেছনে থাকা রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

গত ১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর যৌথভাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে আগামী ২০২৬ সালের রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। রমজান শুরু হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে, অর্থাৎ নির্বাচন সম্ভাব্য ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হতে পারে।

একদিকে আশাবাদ, অন্যদিকে প্রশ্ন

বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই সম্ভাব্য সময়সূচিকে ‘বাস্তবসম্মত ও গ্রহণযোগ্য’ বলে স্বাগত জানালেও, কেবল একটি দলের সঙ্গে আলোচনা করে এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় আশঙ্কা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল।

বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন। তবে সদ্য ঘোষিত সম্ভাব্য সময়সূচি এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠককে অনেকে ইতিবাচক সংলাপের সূচনা হিসেবে দেখছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এটি কোনো পক্ষপাত নয়। বরং এ সিদ্ধান্ত জামায়াত আমিরসহ অনেক নেতার আগেই দেওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে মিল খায়।”

বিরোধিতার সুর

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে বলেছে, “একটি মাত্র রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে যৌথ সংবাদ সম্মেলন দেওয়া মূলত নিরপেক্ষ সরকারের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।” দলটি মনে করে, এটি নির্বাচনী পরিবেশকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একই সুরে বলেছে, “নির্বাচনের সময় নির্ধারণের সঙ্গে সঙ্গে বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়া উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।”

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “ডিসেম্বর থেকে জুন—যেকোনো সময় আমরা নির্বাচনে যেতে রাজি। তবে তার আগে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের মতো মৌলিক শর্ত পূরণ করতে হবে।”

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ-এর বিবৃতি আরও কড়া। তারা বলেছে, “প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচনের পূর্বে জাতীয় ঐক্য এবং সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা জরুরি।”

ইতিবাচক সুরও রয়েছে

তবে, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “এই বৈঠক রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের পথে একটি অগ্রগতি হিসেবে দেখা যেতে পারে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে আরও দলকে অন্তর্ভুক্ত করে আলোচনা হবে।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, “এই বৈঠক আপোষমূলক অগ্রগতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে।”

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সকল পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেই কেবল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে।”


সারাংশ:

  • সম্ভাব্য নির্বাচন: ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে (রমজানের আগে)

  • সমর্থন: বিএনপি ও কিছু দল

  • আশঙ্কা: জামায়াত, এনসিপি, খেলাফত মজলিশ

  • প্রধান দাবি: নিরপেক্ষতা, বিচার, সংস্কার, ইসি পুনর্গঠন

  • বিশ্লেষণ: অচলাবস্থা নিরসনের সম্ভাব্য সূচনা

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version