প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক | ২৪ জুন ২০২৫, সোমবার
সুনামগঞ্জের ঐতিহাসিক ও জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলজ প্রাণী ও পাখিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পর্যটকবাহী হাউসবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
গতকাল রবিবার (২৩ জুন) রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের (রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাওরের ওয়াচ-টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় কোনো হাউসবোট প্রবেশ করতে পারবে না।”
নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য
বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, হাওরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য, জীববৈচিত্র্য এবং পাখি ও জলজ প্রাণীদের প্রজননকালীন সময় বিবেচনায় নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের চাপ, উচ্চ শব্দযুক্ত মিউজিক, হাউসবোটে অনিয়ন্ত্রিত আচরণ এবং আবর্জনার কারণে হাওরের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া বর্ষাকালে হাওরে পাখি, মাছসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর প্রজনন মৌসুম শুরু হয়, যা হুমকির মুখে পড়ে অতিরিক্ত নৌযান চলাচলের কারণে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, “টাঙ্গুয়ার হাওর পরিবেশগতভাবে একটি সংকটাপন্ন এলাকা। গত দুই দশকে এখানে প্রায় ৭০ শতাংশ জীববৈচিত্র্য হারিয়ে গেছে। যদিও এখনও কোনো সরকারি গবেষণা হয়নি, কিন্তু বাস্তব চিত্র ভয়াবহ। এই নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমরা চাই সরকার টেকসই পর্যটন এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি নীতি গ্রহণ করুক।”
পর্যটন নীতিমালার দাবি
বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এবং স্থানীয় সচেতন মহল দীর্ঘদিন ধরেই টাঙ্গুয়ার হাওরে নিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও নতুন নীতিমালার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের মতে, হাওরকে শুধুমাত্র পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে না দেখে, একটি সংরক্ষিত জীববৈচিত্র্য অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
উপসংহার
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মিঠা পানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার নয়, বরং এটি হাজারো পাখি, মাছ ও জলজপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল। এমন অবস্থায় প্রশাসনের হাউসবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা পরিবেশ রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এখন প্রয়োজন, এই নির্দেশনার কার্যকর বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ-সংরক্ষণ পরিকল্পনা।
সূত্র: সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন, পরিবেশ উন্নয়ন সংগঠন, স্থানীয় গণমাধ্যম