প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক | ২৪ জুন ২০২৫, সোমবার
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে সংকেত অমান্য করে পালানোর সময় একটি মোটরসাইকেল থামাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য। রবিবার (২৩ জুন) ভোরে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার ‘হাজী রাস্তার মাথা’ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত পুলিশ সদস্য আলা উদ্দিনের (৩৩) ডান পা ট্রাকচাপায় থেঁতলে যাওয়ায় চিকিৎসকরা তা কেটে ফেলতে বাধ্য হন।
কী ঘটেছিল?
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভোরে পুলিশের একটি অস্থায়ী তল্লাশিচৌকিতে কক্সবাজারগামী দুটি মোটরসাইকেলকে থামার সংকেত দেয় পুলিশ। প্রথম মোটরসাইকেলটি সংকেত অমান্য করে দ্রুত চলে যায়। দ্বিতীয়টি কিছুক্ষণ থেমে থেকে হঠাৎ করে পালানোর চেষ্টা করে। তখন পেছন থেকে এক পুলিশ সদস্য সেটিকে ধাক্কা দেন। ফলে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আরেক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কনস্টেবল আলা উদ্দিনকে ধাক্কা দেয় এবং তিনি কাছাকাছি থাকা একটি ধীরগতির ট্রাকের নিচে পড়ে যান।
দুর্ঘটনার ফলে তাঁর ডান পা সম্পূর্ণভাবে থেঁতলে যায়। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে জরুরি অস্ত্রোপচারে হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়।
আইনগত পদক্ষেপ
লোহাগাড়া থানার উপপরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই মোটরসাইকেল আরোহী, ট্রাকচালক ও হেলপারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সড়ক দুর্ঘটনা ও পুলিশের দায়িত্বপালনে বাধাদান সংক্রান্ত আইনে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের সোমবার চট্টগ্রাম আদালতে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা মোটরসাইকেল ও ট্রাক বর্তমানে থানার হেফাজতে রয়েছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনার ৫৭ সেকেন্ডের একটি সিসিটিভি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে পুলিশের তৎপরতা ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি স্পষ্ট দেখা যায়। অনেকেই পুলিশ সদস্যদের সাহসিকতা ও কর্তব্যপরায়ণতাকে সাধুবাদ জানালেও, কিছু ব্যবহারকারী পুলিশি প্রশিক্ষণ ও কৌশলের প্রশ্ন তুলেছেন।
একজন ব্যবহারকারী তাসনীম হাসান লিখেছেন, “নিয়ম মানাতে গিয়ে এক পুলিশ সদস্য জীবন দিয়েছেন, আরেকজন হয়তো দুজন আরোহীকেই বাঁচিয়েছেন।”
অন্যদিকে মো. গিয়াস নামের এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এ ঘটনা দেখিয়ে দেয়, দেশের পুলিশ বাহিনীতে শৃঙ্খলা, সংবেদনশীলতা ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি এখনো বিদ্যমান।”
পুলিশ বাহিনীর প্রতিক্রিয়া
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আহত পুলিশ সদস্য আলা উদ্দিনের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার পুলিশ বিভাগ বহন করবে এবং তাঁর পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
উপসংহার
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ আবারও সামনে এলো। একইসঙ্গে এটি সতর্কবার্তা দিচ্ছে—সড়কে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা, প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত প্রস্তুতি আরও জোরদার করার।
সূত্র: লোহাগাড়া থানা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সামাজিক মাধ্যম
