শনিবার, ২১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভিআইপি টার্মিনালের চেকিং পেরিয়ে কীভাবে গেল গুলিভর্তি ম্যাগাজিন, খোদ সরকার জবাব খুঁজছে

প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক | ১ জুলাই ২০২৫, ঢাকা
মরক্কোগামী ফ্লাইটে ওঠার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের যুববিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার ব্যাগে গুলিভর্তি ম্যাগাজিন ধরা পড়ায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সামাজিক মাধ্যমে শুরু হওয়া বিতর্কে লাইসেন্স, অস্ত্র ব্যবস্থাপনা এবং ভিআইপি টার্মিনালের নিরাপত্তা জবাবদিহি নিয়েও সমালোচনা চলছে।

আসিফ মাহমুদ নিজে এই ঘটনার ব্যাখ্যায় বলেছেন, বিষয়টি “পুরোপুরি ভুলবশত এবং অনিচ্ছাকৃত (Unintentional)” ঘটেছে। তবে বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ যাত্রীরা প্রশ্ন তুলছেন— কীভাবে একটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন প্রথম স্ক্যানিং চেকিং পেরিয়ে ভেতরে গেল, এবং কেন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?


কী ঘটেছিল?

রোববার (৩০ জুন) আসিফ মাহমুদ মরক্কোর মারাকেশে ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম’-এ অংশ নিতে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার ফ্লাইটের আগে ভিআইপি টার্মিনালে স্ক্যানার চেকিংয়ে তার হাতে বহনযোগ্য ব্যাগে গুলি ভর্তি একটি ম্যাগাজিন ধরা পড়ে।

এক ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা মেটাল ডিটেক্টর পার হয়ে গেছেন। এরপর স্ক্যানারে ম্যাগাজিন ধরা পড়লে তা তিনি নিজে তার প্রটোকল কর্মকর্তার হাতে দিয়ে আবার এগিয়ে যান।


আসিফ মাহমুদের ব্যাখ্যা

ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার জবাবে তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেন:

“প্যাকিং করার সময় একটি ম্যাগাজিন ভুলক্রমে ব্যাগে থেকে যায়। স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ার পর তা প্রটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করি। বিষয়টি সম্পূর্ণ আনইন্টেনশনাল।”

তিনি জানান, নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার প্রয়োজনে তার কাছে লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র রয়েছে। তবে তিনি তার লাইসেন্স কখন, কীভাবে পেয়েছেন এবং অস্ত্র ব্যবহারে প্রশিক্ষণ আছে কি না— তা স্পষ্ট করেননি।


প্রশ্ন উঠছে কীভাবে স্ক্যানিং পার হলো?

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নিয়ম অনুযায়ী, টার্মিনালে প্রবেশের আগে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ঘোষণা করা বাধ্যতামূলক। তা না করলে জব্দ ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।

এমনকি অতীতে ঘোষণা ছাড়া গুলি বা অস্ত্র নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশ করায় একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

একজন এভিয়েশন কর্মকর্তা জানান, “ভিআইপি যাত্রীরা অনেক সময় প্রথম স্ক্যানিংয়ে সহযোগিতা না করেন বা ব্যাগ অন্যের হাতে দেন। এটা নিরাপত্তায় বড় ফাঁক তৈরি করে।”


সরকারের প্রতিক্রিয়া

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন,

“এটা একেবারেই অনিচ্ছাকৃত ভুল। অনেক সময় মোবাইল নিতে গিয়ে চশমা নিয়ে নেওয়ার মতো ভুল হয়। উনি যদি জানতেন, সেটা নিতেন না।”

তিনি আরও জানান, “নেতারা অনেক সময় কিছু প্রিভিলেজ পান। কিন্তু ভবিষ্যতে সব শ্রেণির যাত্রীকে একক নিরাপত্তা নীতিমালায় আনতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”


বিশেষজ্ঞদের মতামত

এভিয়েশন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, “ভুল হতেই পারে। তবে ভিআইপি বলেই যেন কোনো আইনি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়— এটা সঠিক নয়। যদি স্ক্যানিংয়ে ধরা না পড়ত, বড় বিপর্যয় ঘটতে পারত।”

বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, “প্রথম স্ক্যানিংয়ে বিষয়টি ধরা না পড়াটা উদ্বেগজনক। এ ধরনের ঘটনায় ঢাকার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক মান নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।”


অস্ত্র লাইসেন্স প্রশ্নে বিতর্ক

আইন অনুযায়ী, অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে সর্বনিম্ন ৩০ বছর বয়স, তিন বছর আয়কর প্রদান এবং প্রশিক্ষণের রেকর্ড থাকা আবশ্যক। কিছু ক্ষেত্রে পদাধিকারবলে ছাড় থাকলেও, আসিফ মাহমুদের বয়স ও যোগ্যতা নিয়ে আলোচনা রয়েছে।

একাধিক আইনজ্ঞ বলেছেন, “সরকারি নিরাপত্তা থাকা অবস্থায় যদি কেউ ব্যক্তিগত অস্ত্র বহন করেন, তাহলে সেটা তার ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা ও আইনানুগতার ওপর নির্ভর করে।”


আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভাব পড়তে পারে?

বাংলাদেশের প্রধান বিমানবন্দর এখনো যুক্তরাষ্ট্রের FAA ক্যাটাগরি–২ অবস্থায় রয়েছে। নিরাপত্তা ইস্যুতে দুর্বলতা, স্ক্যানিং ব্যর্থতা বা ভিআইপি সুবিধার অপব্যবহার— সবই এই অবস্থান উন্নয়নে বাধা।

একজন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, “বিমানবন্দরের স্ক্যানিং ব্যর্থ হলে এবং গুলি–অস্ত্র এয়ারক্রাফটে উঠে যায়, তা আন্তর্জাতিক বিমাবন্দর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।


উপসংহার

‘ভুল’ দাবি করা হলেও, একজন দায়িত্বশীল উপদেষ্টার ব্যাগে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন থাকা এবং সেটি বিমানবন্দরের প্রথম স্তরের নিরাপত্তা অতিক্রম করা— নিঃসন্দেহে অ্যালার্মিং

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যদিও বিষয়টি ‘ছোট ভুল’ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছে: আইন কি সবাইকে সমানভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে?

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version