শুক্রবার, ৩রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রবাস বুলেটিন

ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনাকে “প্রশংসনীয় ও জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন” হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “দেশের জনগণ ভোটাধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছে। আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।”

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিইউজে ও বিএফইউজে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

‘জুলাই অভ্যুত্থানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই’

মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপি ‘জুলাই অভ্যুত্থান’কে খাটো করে দেখতে চায় না, বরং ঐতিহাসিকভাবে এটিকে যথাযথ মূল্যায়ন করে ‘জুলাই সনদ’–এর প্রস্তাবনা সরকারকে জমা দিয়েছে। বুধবার রাতে সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশপত্র হস্তান্তর করে দলটি।

এর আগে তিনি বিএফইউজে ও ডিইউজে আয়োজিত ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে সাংবাদিক নির্যাতনের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

“সংস্কারে বাধা নয়, বাস্তবতা তুলে ধরি”—বিএনপি

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা সংস্কারকে স্বাগত জানাই। তবে কেউ যদি বলেন, বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, তাহলে সেটা ভুল ব্যাখ্যা। গত ১৭ বছরে প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা, ২০ হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে হত্যার অভিযোগ—এই বাস্তবতা পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আশাবাদী, সামনে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে, যেখানে জনগণ সত্যিকার অর্থে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।”

সীমান্ত হত্যা ও মার্কিন শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ

সীমান্তে পুশইন ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারকে ভারতের সঙ্গে কঠোর কূটনৈতিক আলোচনায় যেতে হবে।” একইসঙ্গে ন্যায্য পানির প্রাপ্তি নিয়েও আন্তরিক আলোচনার দাবি জানান তিনি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এ ধরনের শুল্ক পোশাকশিল্পকে মুখ থুবড়ে ফেলতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে গভীর সংকট সৃষ্টি করবে। সরকারকে অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে পদক্ষেপ নিতে হবে।”

জাতীয় ঐক্যের ডাক

গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে জাতিগত ঐক্য গড়ে তোলা। বিভক্তির রাজনীতি নয়, আমাদের প্রয়োজন অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিবেশ।”

আলোচনায় অন্যরাও

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “রাজনৈতিক দল, জনগণ ও গণমাধ্যম—এই তিনটি শক্তির সমন্বয়েই রাষ্ট্র গঠন সম্ভব। বিভেদ নয়, কমন ইস্যুতে ঐক্য জরুরি।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, “স্বৈরাচার চলে গেলেও তার মানসিকতা এখনো সমাজে রয়ে গেছে। তরুণ নেতৃত্বেও সেই আচরণ দেখা যাচ্ছে। যারা ‘অমুক না হলে কিছুই হবে না’ মনোভাবে চলেন, তারা গণতন্ত্রের নয়।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানুষ আশাবাদী হয়েছে। এই বিজয় রক্ষা করতে ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রয়োজন।”

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কবিতা পাঠ

দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার বক্তব্যের শুরুতে জুলাই বিপ্লবে প্রাণদানকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে নির্যাতিত, গুম-খুন ও মামলার শিকারদেরও স্মরণ করেন। এ সময় তিনি নিজের লেখা কবিতা ‘জুলাই বাংলাদেশ’ আবৃত্তি করেন।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন:

  • বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম

  • নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না

  • জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ

  • বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন

  • মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী

  • সাংবাদিক নেতা ইলিয়াস খান, সাঈদ খান

  • প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী প্রমুখ।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version