মঙ্গলবার, ২৮শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামীকাল ১১ আগস্ট মালয়েশিয়ার সরকারি সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের কারণে দুই নেতার আসন্ন বৈঠককে বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ সফরে যদি বিনা খরচে শ্রমিক পাঠানোর দাবি উত্থাপন করা হয়, তাহলে তা দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বিশাল সুফল বয়ে আনতে পারে।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান

মালয়েশিয়ার বিদেশি শ্রমিকের সর্বোচ্চ অনুমোদিত সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ হলেও বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ২০ লাখের কিছু কম। প্রতিবছর অবসর, চুক্তির মেয়াদ শেষ ও নতুন কর্মসংস্থানের ফলে প্রায় ৫ লাখ শ্রমিকের চাহিদা তৈরি হয়। বাংলাদেশ বর্তমানে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণের শীর্ষ দেশ, এবং সবকিছু অনুকূলে থাকলে আগামী ছয় বছরে প্রায় ১২ লাখ নতুন শ্রমিক প্রেরণ সম্ভব হতে পারে।

আন্তর্জাতিক আইন ও যৌক্তিক দাবি

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-র ‘Employer Pays Principle’ অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগের সব খরচ নিয়োগকর্তার বহন করার কথা। থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া ইতিমধ্যেই এ সুবিধা পাচ্ছে। নেপাল ও ভারত আংশিকভাবে এ নীতি অনুসরণ করছে। কিন্তু শীর্ষ শ্রমিক প্রেরণকারী দেশ হয়েও বাংলাদেশ এখনো এ সুবিধা পায়নি এবং এর আগে সরকারিভাবে দাবি তোলা হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, ড. ইউনূসের সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সুসম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা এই দাবিকে গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য করে তুলেছে।

সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সুফল

বর্তমানে একজন শ্রমিক গড়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয় করে মালয়েশিয়া যান। বছরে ২ লাখ শ্রমিক গেলে এ খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়, যা ছয় বছরে দাঁড়াবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। বিনা খরচের নীতি চালু হলে এই অর্থ সাশ্রয় হবে। বরং নিয়োগকর্তা শ্রমিকের পাসপোর্ট, মেডিকেল, ভিসা ও বিমান ভাড়ার খরচ বহন করলে বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশে আসবে, যা ছয় বছরে হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

রেমিট্যান্সে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি

বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত, যারা গড়ে মাসে ২৮ হাজার টাকা দেশে পাঠান। এতে মাসিক রেমিট্যান্স আয় প্রায় ৪,১৬৪ কোটি টাকা। আগামী ছয় বছরে নতুন ১২ লাখ শ্রমিক যুক্ত হলে মাসিক রেমিট্যান্সে আরও প্রায় ১,৭০০ কোটি টাকা যোগ হবে।

চ্যালেঞ্জ ও সমাধান প্রয়োজন

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মানব পাচার ও অর্থ পাচার মামলার মতো জটিলতা মালয়েশিয়ার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ইস্যু ‘আন্তর্জাতিক মানব পাচার সূচক’ (TIP) র‌্যাংকে প্রভাব ফেলছে, যেখানে মালয়েশিয়া বর্তমানে টায়ার-২ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাধান করতে বলেছে।

ঐতিহাসিক সুযোগ

প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে এটি তার প্রথম ও সম্ভবত শেষ মালয়েশিয়া সফর হতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এ সফরে বিনা খরচে শ্রমিক পাঠানোর চুক্তি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের লাখো প্রবাসী শ্রমিকের জীবনে তা বিপুল পরিবর্তন আনবে এবং সরকারের জন্য একটি ঐতিহাসিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version