শুক্রবার, ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রবাস বুলেটিন

বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংস্কার বাস্তবায়নসহ একাধিক শর্ত তুলে ধরে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অবস্থান বিএনপির ওপরও চাপ সৃষ্টি করছে এবং নির্বাচনের অংশগ্রহণমূলক চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

পটভূমি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। এর আগে জুন মাসে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার বৈঠকে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়।

এই সিদ্ধান্তে জামায়াত ও এনসিপি অসন্তোষ প্রকাশ করে জানায়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় না এনে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ‘সাজানো নির্বাচনের’ ইঙ্গিত বহন করে।

জামায়াত ও এনসিপির শর্ত

দুটি দলের কমন দাবি—

  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য আইনগত ভিত্তি তৈরি

  • নির্বাচনের আগে থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা

  • সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতি চালু

  • আওয়ামী লীগ আমলে সংঘটিত অপরাধ ও দুর্নীতির বিচার নিশ্চিত করা

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মা. তাহের বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আগে সংস্কারের সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা এতে বাধা দিচ্ছে, তারাই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়।”

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন অভিযোগ করেন, “নতুন সংবিধান, সংস্কার ও বিচারের বিষয় পাশ কাটিয়ে সরকার এখন শুধু নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।”

বিএনপির অবস্থান

বিএনপি মনে করে, নির্বাচনসংক্রান্ত সংস্কার ছাড়া অন্য সব সংস্কার নির্বাচিত সংসদ করবে। দলটি PR পদ্ধতিরও বিরোধিতা করছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জামায়াত-এনসিপির বক্তব্যকে “মাঠের বক্তৃতা” আখ্যা দিয়ে বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন যে সব দলই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে অংশ নেবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত

  • জামায়াত ও এনসিপি নির্বাচনের আগে দাবিগুলো পূরণ না হলে ভোট বর্জনের পথে যেতে পারে।

  • এটি নির্বাচনের অংশগ্রহণমূলক বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ণ করবে এবং বিএনপিকে অস্বস্তিতে ফেলবে।

  • এনসিপির সংসদীয় আসনে জয়ের সম্ভাবনা কম থাকায় তারা আসন নিয়ে দরকষাকষির চাপ তৈরির কৌশল নিতে পারে।

  • বিএনপির বিস্তৃত জনসমর্থনের কারণে জামায়াত নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, “এটি বিএনপির ওপর চাপ তৈরির কৌশলও হতে পারে। পাশাপাশি আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতার প্রেক্ষাপটও থাকতে পারে।”

সম্ভাব্য প্রভাব

  • দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি বাড়লে নির্বাচন সংঘাতপূর্ণ হতে পারে।

  • আওয়ামী লীগ এই বিভক্তিকে রাজনৈতিক সুবিধায় রূপ দিতে পারে এবং নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হতে পারে।

  • সরকার আপাতত নতুন করে আলোচনা শুরু করবে না, তবে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে—যেখানে তফসিল ও ভোটের পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

উপসংহার

যদিও জামায়াত ও এনসিপি ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আপত্তি করছে না, তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে তারা অনড়। তাদের আন্দোলনের হুমকি ও শর্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা ও সংশয় বাড়াচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, গণতন্ত্রে ফেরার জন্য নির্বাচন অপরিহার্য, তবে কোনো পক্ষের কারণে তা অনিশ্চিত হলে দায় সেই পক্ষকেই বহন করতে হবে।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version