প্রকাশের তারিখ: ২৩ অক্টোবর ২০২৫
প্রতিবেদক: প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক
চীনের প্রত্যক্ষ সহায়তা ও সামরিক প্রযুক্তির জোরে হারানো এলাকা পুনর্দখলে নেমেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। দেশটির উত্তরাঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দখলে থাকা শহরগুলোতে টানা বিমান হামলা চালিয়ে সেনারা ফের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। এতে যুদ্ধক্ষেত্রে শক্তির ভারসাম্য স্পষ্টভাবে জান্তার পক্ষে পাল্টে গেছে।
কিয়াউকমে পুনর্দখল: তিন সপ্তাহে উল্টো চিত্র
মাসের পর মাস লড়াই শেষে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) কিয়াউকমে শহর দখলে নিলেও, মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে শহরটি পুনর্দখল করে নিয়েছে সেনাবাহিনী।
বিমান থেকে ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা নিক্ষেপ, ড্রোন হামলা ও আর্টিলারি আঘাতে শহরের বড় অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। বহু বাসিন্দা পালিয়ে গেলেও সেনা নিয়ন্ত্রণ ফেরার পর কেউ কেউ ফিরতে শুরু করেছেন।
টিএনএলএর মুখপাত্র তার পার্ন লা বলেন, “এ বছর সেনাবাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ও বিমানশক্তি উভয়ই বহুগুণ বেড়েছে। আমরা যতটা পারি প্রতিরোধ করছি।”
এর কিছুদিন পর সেনারা বিদ্রোহীদের দখলে থাকা শেষ শহর হিসপাও পুনর্দখল করে, যা চীনা সীমান্ত পর্যন্ত প্রধান সড়ককে সম্পূর্ণ জান্তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
চীনের ভূমিকা ও জান্তার উত্থান
বিশ্লেষকদের মতে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে চীনের সরাসরি সমর্থন ও উন্নত সামরিক প্রযুক্তি।
বেইজিং প্রকাশ্যে জান্তার ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরিকল্পনাকে সমর্থন করছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, ভোট আয়োজনের অজুহাতে সেনাবাহিনী যতটা সম্ভব এলাকা পুনর্দখলের চেষ্টা করছে।
চীন থেকে হাজার হাজার উন্নত ড্রোন ও ‘জ্যামিং প্রযুক্তি’ কেনার ফলে জান্তা বাহিনী এখন আকাশযুদ্ধে সুবিধা পাচ্ছে। মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডারের সহায়তায় নির্ভুলভাবে বোমা বর্ষণের সক্ষমতাও অর্জন করেছে তারা।
চলতি বছর এসব হামলায় অন্তত এক হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিদ্রোহীদের দুর্বলতা ও ভাঙন
অন্যদিকে, বিদ্রোহী শিবিরে ঐক্যের অভাব ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। শতাধিক জনগণের প্রতিরক্ষা বাহিনী (পিডিএফ) ও জাতিগত গোষ্ঠীর সশস্ত্র দলে বিভক্ত এই আন্দোলনের অনেকের হাতেই পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই। কেউ কেউ কেন্দ্রীয় সরকারের পতনের চেয়ে জাতিগত স্বায়ত্তশাসনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ নামে তিনটি জাতিগত গোষ্ঠীর জোট “অপারেশন ১০২৭” শুরু করে ১৮০টিরও বেশি সেনা ঘাঁটি দখল করেছিল। কিন্তু সেই সাফল্য এখন অতীত।
আন্তর্জাতিক কৌশল বিশ্লেষক মরগান মাইকেলস বলেন, “তখন দুটি ভুল ধারণা তৈরি হয়েছিল— বিদ্রোহীরা ঐক্যবদ্ধ জাতীয় আন্দোলন, এবং সেনাদের মনোবল পুরোপুরি ভেঙে গেছে। কিন্তু জান্তা জোরপূর্বক সেনা নিয়োগ শুরু করে, প্রায় ৬০ হাজার নতুন সদস্য যুক্ত হয়েছে।”
চীনের প্রযুক্তি, বিদ্রোহীদের সংকট
‘আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট (ACLED)’–এর বিশ্লেষক সু মন জানান, জান্তার ড্রোন হামলা এখন প্রায় অব্যাহত, যা বিদ্রোহীদের প্রাণহানি বাড়াচ্ছে।
তার ভাষায়, “চীনের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং দ্বৈত ব্যবহারের প্রযুক্তি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বিদ্রোহীদের জন্য নতুন সমস্যা তৈরি করেছে। তারা এখন ড্রোন কিনতে বা বানাতে পারছে না। জান্তার হাতে উন্নত জ্যামিং প্রযুক্তি থাকায় বিদ্রোহীদের অনেক ড্রোন আকাশেই অকেজো হয়ে পড়ছে।”
উপসংহার
চীনের সামরিক সহায়তা ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে মিয়ানমারের যুদ্ধক্ষেত্রে ভারসাম্য এখন স্পষ্টভাবে জান্তার পক্ষে।
বিদ্রোহী জোটগুলো যদি দ্রুত ঐক্য ও সামরিক সক্ষমতা না বাড়াতে পারে, তবে চীনের ছায়াতলে জান্তার পুনরুত্থান মিয়ানমারের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের চিত্র একেবারেই পাল্টে দিতে পারে।
সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ও বিশ্লেষক মন্তব্য

