প্রকাশের তারিখ: শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন হল সংসদ নির্বাচনে কোনো ছাত্রসংগঠনই সব কটি হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সর্বোচ্চ ১৪টিতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ কোনো হলে প্যানেল দেয়নি। অন্য সংগঠনগুলোর অবস্থাও প্রায় একই।
প্রার্থীসংখ্যা
প্রতিটি হলে ভিপি (সহসভাপতি), জিএস (সাধারণ সম্পাদক)সহ মোট ১৩টি করে পদ রয়েছে। সে হিসাবে সব মিলিয়ে মোট পদ ২৩৪টি। এর বিপরীতে প্রাথমিক যাচাই–বাছাই শেষে বৈধ ঘোষিত হয়েছে ১ হাজার ১০৮ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র।
ছাত্রসংগঠনগুলোর অবস্থান
-
ছাত্রদল: ছাত্রদের ১৩টি হলেই পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে। ছাত্রীদের পাঁচ হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে না পারলেও রোকেয়া হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল, সুফিয়া কামাল হলে ৯ পদে, বাংলাদেশ–কুয়েত মৈত্রী হলে ৩ পদে, শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে ৬ পদে এবং শামসুন নাহার হলে ৫ পদে প্রার্থী দিয়েছে।
-
ইসলামী ছাত্রশিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ: নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে কোনো হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেয়নি। তবে উভয় সংগঠন জানিয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে অনেককে তারা সমর্থন দেবে।
-
অন্য সংগঠনগুলো: ছাত্রীদের হলে প্রার্থী কম হওয়ার কারণে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পারেনি।
ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও ডাকসু জিএস পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদ বলেন, “হলে রাজনীতি থাকা না থাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বিধা আছে। আমরা প্রশাসনকে ই-মেইলের মাধ্যমে মতামত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। প্রশাসন তা করেনি। তাই আমরা হলে প্যানেল না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও ডাকসু জিএস পদপ্রার্থী আবু বাকের মজুমদার জানান, তাঁদের সংগঠনের প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, “ছাত্রী হলে আমাদের নেতা–কর্মী থাকলেও অনেকে প্রার্থী হতে চাননি। তবে ছাত্রী সংস্থার কিছু প্রার্থী সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে গুপ্ত রাজনীতি করছে। এটি বন্ধ হওয়া উচিত।”
প্রার্থীদের ভিড়
প্রার্থীসংখ্যা বিবেচনায় ছাত্রদের হলে প্রতিযোগিতা বেশি। জগন্নাথ হলে ৫৯ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৬৪ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৬২ জন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ৭০ জনসহ প্রতিটি হলে ৬০ থেকে ৮০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ছাত্রীদের হলে কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪০ জন, রোকেয়া হলে ৪৫ জন, বাংলাদেশ–কুয়েত মৈত্রী হলে ৩১ জন, শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে ৩৬ জন এবং শামসুন নাহার হলে ৩৬ জন প্রার্থী হয়েছেন।
আলোচনায় দুই স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী
ভিপি পদে ৪৮ জন প্রার্থীর মধ্যে দুজনকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে—
-
জুলিয়াস সিজার তালুকদার: একসময় ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ) রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ২০১৯ সালে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ থাকলেও প্রার্থিতা বহাল রেখেছে নির্বাচন কমিশন।
-
মুহাম্মাদ আবু তৈয়ব: এবারের সবচেয়ে প্রবীণ প্রার্থী, বয়স ৪৫। একসময় সাংবাদিকতা করতেন এবং ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত। তিনি বলেন, “আমি ইতিহাসের অংশ হতে প্রার্থী হয়েছি, জেতা–হারার বিষয় নয়।”
পরবর্তী ধাপ
২৫ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। ২৬ আগস্ট চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার।
👉 পরবর্তী প্রতিবেদনে থাকছে: শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলীয় প্যানেল কতটা গ্রহণযোগ্য—এই নির্বাচনে তার প্রতিফলন।