রবিবার, ৯ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৪শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রকাশের তারিখ: বৃহস্পতিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী সাদাপাথর পর্যটন স্পট থেকে কয়েক মাসে কয়েকশ’ কোটি টাকার পাথর লুটের ঘটনায় রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নাম উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে।

দুদকের অনুসন্ধান

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাথর লুটপাটে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগের ৪২ জন নেতা ও ব্যবসায়ী। তাদের সহযোগিতা করেছেন বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ৪ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি এবং বিজিবি সদস্যরা।

প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—

  • বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী: রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার পরিবর্তে অবৈধ স্বার্থরক্ষা করেছেন।

  • জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদপুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান: যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

  • কোম্পানীগঞ্জের চার ইউএনও (আজিজুন্নাহার, আবুল হাছনাত, ঊর্মি রায় ও আবিদা সুলতানা): পাথর লুট ঠেকাতে কোনো সদিচ্ছা দেখাননি।

  • কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান ও বিজিবি সদস্যরা: লুট হওয়া পাথর থেকে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত।

এই অনুসন্ধান পরিচালনা করেন দুদকের সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের একটি টিম। তারা ১৩ আগস্ট ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন এবং ১৬ আগস্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রশাসনিক পদক্ষেপ

দুদকের প্রতিবেদনের পর গত সোমবার জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহারকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার নতুন জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বলেন, “লুণ্ঠিত পাথর উদ্ধার, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং স্থায়ীভাবে পাথর চুরি ঠেকাতে কাজ করা হবে।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

পাথর লুটপাটের ঘটনায় নাম আসায় প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা।

  • সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী,

  • জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. ফখরুল ইসলাম,

  • এনসিপির সিলেট জেলা প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন—তিনজনই এ প্রতিবেদনের অভিযোগকে “ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে দাবি করেছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান

প্রতিবেদন প্রকাশের পরও পাথর উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে র‌্যাব-৯ সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩৭ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করে। তবে এ সময় মালিককে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে র‌্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

দুদকের অবস্থান

প্রতিবেদন সম্পর্কে দুদকের সিলেট উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাত মন্তব্য করতে রাজি না হলেও বলেন, “১৩ আগস্ট এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা করে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা নিয়ে ১৬ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।”


👉 প্রবাসী পাঠকদের জন্য: সিলেটের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাটে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ স্থানীয় অর্থনীতি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version