প্রকাশের তারিখ: ৪ অক্টোবর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছে। গাজীপুর-৬ ও নরসিংদী-৫ বাদে বাকি ২৯৮ আসনে প্রার্থী ঠিক করে চার মাস আগেই মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছে দলটি। বর্তমানে কেন্দ্রভিত্তিক প্রস্তুতি, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ ও ভোটকেন্দ্রে শৃঙ্খলা রক্ষায় কমিটি গঠনের কাজ চলছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এসব কার্যক্রম শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের দায়িত্বশীলরা।
নির্বাচনী প্রস্তুতি ও কৌশল
- 
জামায়াতের লক্ষ্য: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনায় ন্যায় ও সমতাভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন।
 - 
৩৫–৪৫ বছর বয়সী তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনা হচ্ছে।
 - 
নীরব প্রচারণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্যক্রম ও স্থানীয় উন্নয়নকেন্দ্রিক প্রতিশ্রুতিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
 - 
সমমনা দলের সঙ্গে সমঝোতা হলে কিছু আসনে প্রার্থী প্রত্যাহারের সম্ভাবনা রয়েছে।
 
তরুণ নেতৃত্বের উত্থান
অতীতে প্রবীণ নেতৃত্বের আধিপত্য থাকলেও এবার জামায়াত তরুণ প্রার্থীদের প্রাধান্য দিচ্ছে।
- 
ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকারকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
 - 
স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা, সমাজসেবামূলক কার্যক্রম ও উঠান বৈঠককে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
 
শীর্ষ নেতৃত্বের অংশগ্রহণ
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ২০ সদস্যের মধ্যে ১৫ জন আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
- 
আমির ডা. শফিকুর রহমান (ঢাকা-১৫)
 - 
সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার (খুলনা-৫)
 - 
নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান (রাজশাহী-১), এ টি এম আজহারুল ইসলাম (রংপুর-২), সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের (কুমিল্লা-১১) সহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা প্রার্থী হয়েছেন।
 
আলোচিত প্রার্থীরা
- 
ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ (পটুয়াখালী-২)
 - 
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের আলোচিত আইনজীবী শিশির মনির (সুনামগঞ্জ-২)
 - 
ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী (ঠাকুরগাঁও-১)
 - 
আলোচিত বক্তা আমির হামযা (কুষ্টিয়া-৩)
 
দণ্ডিত নেতাদের সন্তানেরাও প্রার্থী
- 
মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নাজিবুর রহমান মোমিন (পাবনা-১)
 - 
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই ছেলে মাসুদ সাঈদী (পিরোজপুর-১) ও শামীম সাঈদী (পিরোজপুর-২)
 - 
মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমদ বিন আরমান (ঢাকা-১৪)
 
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও অসন্তোষ
যদিও প্রথমবারের মতো জামায়াত দলের বাইরের জনপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রার্থী করার চিন্তা করছে, তবুও কয়েকটি আসনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
- 
পাবনা-৫ ও ময়মনসিংহ-৬ আসনে প্রার্থী নিয়ে দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে।
 - 
চট্টগ্রাম-১৫ আসন নিয়েও আপত্তি উঠেছে, তবে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
 
নির্বাচনী সমীকরণ
জামায়াত ১৯৯৬ সালের পর এককভাবে নির্বাচন করেনি। এবার তারা ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে। তবুও দলীয় প্রস্তুতি মূলত একক নির্বাচনের কৌশল ধরে এগোচ্ছে।
নেতৃত্বের আত্মবিশ্বাস
সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন,
“আগে সভা-সমাবেশে মানুষের অংশগ্রহণ সীমিত ছিল, এবার কয়েক গুণ বেশি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসছে। মানুষ পরিবর্তন চাইছে। জামায়াতকে এখনো পরীক্ষা করা হয়নি, আমরা সেই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত।”
🔹 উপসংহার:
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াত বহুমুখী প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে। তরুণ প্রার্থী, সংগঠিত প্রচারণা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক কার্যক্রম তাদের নির্বাচনী কৌশলের মূল ভিত্তি। এখন দেখার বিষয়, এই প্রস্তুতি ভোটের মাঠে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে।

