প্রকাশের তারিখ: সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
প্রবাস ডেস্ক | প্রবাস বুলেটিন
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া, যেখানে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নির্মাণ খাত দীর্ঘদিন ধরে অন্যতম প্রধান কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। দেশটির দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে দক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণে। তবে, অতীতের জটিলতা ও অনিয়ম এড়াতে মালয়েশিয়া সরকার এখন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এনেছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা, যা অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য আরও নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে।
🔨 নির্মাণ খাতে বাড়ছে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা
মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাতে সারা বছরই চলমান থাকে বৃহৎ প্রকল্প, সেতু, হাইওয়ে, ও শিল্পাঞ্চল নির্মাণের কাজ। এই খাতে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে রাজমিস্ত্রি, ওয়েল্ডার, শাটারিং কার্পেন্টার, ইলেকট্রিশিয়ান ও প্লাম্বারদের।
দক্ষ শ্রমিকরা কাজের মান অনুযায়ী ভালো বেতন, ওভারটাইম ও অন্যান্য ভাতা পেয়ে থাকেন, যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
⚙️ নিয়োগে নতুন কাঠামো: জিটুজি ও সিলেক্টিভ রিক্রুটমেন্ট
মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাতে বর্তমানে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া এখন দুটি ধারা অনুসারে চলছে—
১️⃣ সরকারি ব্যবস্থাপনায় (বোয়েসেল):
যারা আগে কলিং ভিসার কোটায় যেতে পারেননি, তাদের জন্য বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) বিশেষ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটি দালালমুক্ত ও স্বল্প ব্যয়সম্পন্ন একটি নিরাপদ প্রক্রিয়া।
২️⃣ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় (সিলেক্টিভ রিক্রুটমেন্ট):
নতুন নিয়মে মালয়েশিয়া সরকার শুধুমাত্র সরকারি প্রকল্পভিত্তিক নিয়োগ অনুমোদন করছে। বেসরকারি নির্মাণ কোম্পানিগুলোর জন্য নিয়োগের সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। এখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরাসরি আবেদন করতে পারে না, বরং অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
🧾 মালয়েশিয়া যেতে যে ধাপগুলো মানতে হবে
বিএমইটি নির্ধারিত বৈধ প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাতে কাজ করতে চাইলে কর্মীদের নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে—
- 
দক্ষতা উন্নয়ন: রাজমিস্ত্রি, মেকানিক, ইলেকট্রিশিয়ানসহ সংশ্লিষ্ট ট্রেডে সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) থেকে প্রশিক্ষণ ও সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
 - 
বিএমইটি ডেটাব্যাংকে নিবন্ধন: দক্ষতা অনুযায়ী বিএমইটি ডেটাব্যাংকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
 - 
বৈধ এজেন্সি নির্বাচন: কেবল সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি বা বোয়েসেলের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।
 - 
চুক্তিপত্র যাচাই: নিয়োগপত্রে বেতন, কর্মঘণ্টা, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ও ওভারটাইম সুবিধা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে কিনা যাচাই করুন।
 - 
বহির্গমন ছাড়পত্র: স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও ভিসা শেষে বিএমইটি স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে হবে—যা বৈধভাবে দেশ ছাড়ার চূড়ান্ত অনুমতি।
 
⚠️ প্রতারণা এড়াতে যা করবেন
মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহী কর্মীদের প্রতারণা থেকে বাঁচতে অবশ্যই কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে—
- 
❌ নগদ লেনদেন করবেন না: সরকারি ফি ছাড়া অন্য কোনো অগ্রিম টাকা দালালকে দেবেন না। সব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করুন এবং রসিদ সংরক্ষণ করুন।
 - 
⚠️ অবিশ্বাস্য প্রস্তাবে সতর্ক থাকুন: কেউ যদি কম সময়ে বা কম খরচে পাঠানোর আশ্বাস দেয়, তবে তা প্রতারণা হতে পারে।
 - 
📞 সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন: কোনো প্রশ্ন বা অভিযোগ থাকলে প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার (১৬১৩৫)-এ যোগাযোগ করুন।
 
মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাতে কর্মসংস্থানের এই নতুন ধারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ। সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত এই স্বচ্ছ ও নিরাপদ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে প্রবাসী কর্মীরা প্রতারণা থেকে বাঁচতে পারবেন এবং দেশের বৈদেশিক আয়ে আরও বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।
— প্রবাস ডেস্ক, প্রবাস বুলেটিন

