বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘আমরা যদি একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ১৫ বছর অপেক্ষা করতে পারি, তাহলে আরেকটা ভালো নির্বাচনের জন্য দুই-তিন মাস আগে-পরে কোনো গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচন নিরপেক্ষ হলো কি না। ততটুকু সময় জামায়াতে ইসলামী দিতে রাজি আছে। তবে নির্বাচনের আগে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ শেষ করতে হবে। জীবনের বিনিময়ে যারা নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের মাঝ থেকে চলে গেল, তারা তো আমাদের ঋণী করে গেছে। আমাদের সে রক্তের ঋণের দায় শোধ করতে হবে।’
আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ভোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ভোলা জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যখন কাজ শুরু করেছেন, তখন থেকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ক্ষমতায় বসার পাঁচ মাসে চারটি ক্যুর চেষ্টা হয়েছে। জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার–কাণ্ড, সচিবালয়ে আগুন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে দিয়ে নানা ইস্যু তুলে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই দাবি, সেই দাবি তুলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা হচ্ছে। এ অবস্থায় সংস্কার করবে, না ভোটের দিকে যাবে, না চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে। আমরা সরকারকে বলেছি, গোটা বাংলাদেশ আপনার পেছনে আছে। আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) তাড়াতাড়ি সংস্কার করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। আমরা বলেছি, যে মিথ্যা ট্রাইব্যুনাল তুমি বানিয়েছিলে, মিথ্যা ট্রাইব্যুনাল, মিথ্যা বিচারক, মিথ্যা সাক্ষী, মিথ্যা বিচার করে ফাঁসি দিয়েছ, তুমি এখন যাবা কোথায় বুবুজান। এখন তোমার বিচার হবে। তোমার বিরুদ্ধে ২২৬টির ওপর মামলা হয়েছে। খুনের মামলা, গণহত্যার মামলা, রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে, ইন্টারপোলে ওয়ারেন্ট হয়েছে, রেহাই নাই বুবুজান। আমাদের নেতাদের ফাঁসি দিতে তুমি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছ, তোমার বিচার করতে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া লাগবে না। সত্য ঘটনা দিয়ে তোমার কাম সারা যাবে।’
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কেউ কেউ নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে গেছে। তারা বলে কোনো সংস্কার দরকার নেই। সংস্কার হলো চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার আর নির্বাচন একসঙ্গে হবে। এ কথার মধ্যে আমরা অন্য গন্ধ পাই। ওই যে ডামি, আমির নির্বাচনের মতো। তোমরাও কেটেকুটে বাক্স ভরতে চাও। ভাই রে…আমাদের তো টাকাও নাই, মাস্তানও নাই, আমরা তো ব্যালট কাটতে পারব না। আমরা কেন্দ্র দখল করতে পারব না। এখন জামায়াতের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাঁরা আওয়ামী ভাষায়, ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলছেন। আমরা বলি খবরদার, এই পথ সর্বনাশা পথ, এ পথে ফ্যাসিবাদের অবসান হয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই আমাদের লাভ, বাংলাদেশের মানুষও চায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ জন্য চাই সংস্কার, সেই সংস্কার শেষ করুন। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলো বিবেচনা করে, পলিটিক্যাল পার্টি, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) মতবিনিময় করে, সংস্কারের কাজগুলো শেষ করুন। ছয় মাস পর সংস্কার শেষ করে আপনি জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।’
জামায়াতে ইসলামীর ভোলা জেলা শাখার আমির মো. জাকির হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ভোলার সেক্রেটারি মো. হারুন অর রশিদের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহ-সেক্রেটারি মুহাম্মদ মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, ভোলার সাবেক আমির ফজলুল করীম, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি আ জ ম ওবায়দুল্লাহ প্রমুখ।