শনিবার, ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে এক তরুণকে তাঁর মায়ের সামনেই নির্যাতন করেছে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। ইমরান হোসেন (২১) নামের ওই তরুণ গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গা ঢাকা দিয়েছে জড়িত ব্যক্তিরা।

নির্যাতিত তরুণের মায়ের দাবি, শহিদুর রেজা ওরফে রতন মিয়াজী নামে একজনের নেতৃত্বে যারা তাঁর ছেলেকে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছে, তারা সবাই স্থানীয় সন্ত্রাসী। তাদের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে প্রায় রাত ৯টা পর্যন্ত এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার ইমরান দৌলতপুর গ্রামের মো. শাহ আলমের ছেলে। ওই তরুণকে নির্যাতনের ঘটনা স্থানীয় একটি মসজিদের সিসি ক্যামেরায় বিষয়টি কিছুটা ধরা পড়েছে। শনিবার সকাল থেকে কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ ঘটনায় আজ শনিবার বিকেলে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন নির্যাতিত তরুণের মা। এতে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। থানায় দায়ের করা অভিযোগের প্রধান আসামি শহিদুর রেজা ওরফে রতন মিয়াজীও একই এলাকার বাসিন্দা।

ইমরানের মা আফরোজা বেগম জানান, শহিদুর রেজা রতন মিয়াজী চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এলাকায় তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। তার সামাজিক অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রায় সময়ে প্রতিবাদ করত ইমরান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল ওই বাহিনীর সদস্যরা।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আফরোজা বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার পরে তারাশাইল বাজার বিকাশ দোকান থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে আমার ছেলেকে একা পেয়ে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর শুরু করে। আমার ছেলের চিৎকার শুনে আমি এগিয়ে গেলে তারা আমাকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। এ সময়ে তারা মসজিদের সামনের একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে আমার সামনেই প্রায় তিন ঘণ্টা ইমরানের ওপর নির্মম নির্যাতন করে। এরপর মৃত ভেবে আমার ছেলেকে ফেলে রেখে যায়। তারা আমার ছেলের সঙ্গে থাকা টাকাও নিয়ে গেছে। আমি ওই সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।’

আত্মীয়স্বজন ইমরানকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাবেদ হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাত প্রায় ১২টা ২০ মিনিটে গুরুতর অবস্থায় ইমরান হোসেনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমরা তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করি।’

এদিকে শনিবার সকাল থেকে ইমরানকে নির্যাতনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এর পর থেকে নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তিরা এলাকা থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন। প্রধান অভিযুক্ত শহিদুর রেজার মুঠোফোন সংযোগ বন্ধ পাওয়া গেছে। এ জন্য কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইমরান হোসেন নামের ওই যুবককে নির্যাতনের একটি ভিডিও চিত্র আমার নজরে এসেছে। বাড়ি ফেরার পথে ইমরানকে জিম্মি করে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় শহিদুর রেজা রতন মিয়াজীকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে লিখিতি অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার তরুণের মা। দ্রুত অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করা হবে। আসামিরা সবাই এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।’

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version