মঙ্গলবার, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রায় ১৫ বছরের দীর্ঘ বিরতির পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরায় সক্রিয় করার বিষয়ে একমত হন।

বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পক্ষে অংশ নেন পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের আসন্ন ঢাকা সফরের (২৭ এপ্রিল) প্রেক্ষাপটে এ বৈঠককে ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক অগ্রযাত্রার ভিত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

দুই দেশের সংবাদ সম্মেলন ও আলাদা বিবৃতিতে বলা হয়, সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বৈঠকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ার আহ্বান জানায় বাংলাদেশ।

তবে আলোচনার বড় একটি দিক থেকে ভিন্ন অবস্থানও লক্ষ করা গেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদের ন্যায্য হিস্যার মতো অমীমাংসিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ইস্যুর দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানানো হলেও পাকিস্তানের বিবৃতিতে সেগুলো অনুপস্থিত ছিল।

পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, “সম্পর্ককে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে এ ধরনের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুত সুরাহা প্রয়োজন।” যদিও পাকিস্তান পক্ষ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে, তথাপি তাদের বিবৃতিতে ইস্যুগুলোর অনুল্লেখ কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।

এ বিষয়ে একাধিক বাংলাদেশি প্রতিনিধি জানান, পাকিস্তান পূর্বেও একই নীতিতে এসব ইস্যু এড়িয়ে চলেছে। ২০১০ সালের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও একই ঘটনা ঘটেছিল।

বিশিষ্ট কূটনীতিক ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবীর বলেন, “এগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট জবাব চাওয়া সম্ভব হবে। যেহেতু দাবিগুলো ন্যায্য ও যৌক্তিক, পাকিস্তান আজ না হোক কাল তা মানতে বাধ্য হবে।”

পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এই বৈঠককে ‘১৫ বছর পর বরফ গলানো’ হিসেবে চিহ্নিত করে মন্তব্য করেছে, দুই পররাষ্ট্রসচিব সম্পর্ক উন্নয়নে অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে পেয়েছেন।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাস জটিল ও সংবেদনশীল হলেও সাম্প্রতিক কূটনৈতিক অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। তবে স্থায়ী অগ্রগতির জন্য অতীতের দায় মেনে নেয়া এবং ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর নিরপেক্ষ সমাধান অপরিহার্য।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version