স্টাফ রিপোর্টার | প্রবাস বুলেটিন
ঢাকার জনপ্রিয় গণপরিবহন মেট্রোরেলে ভাড়া পরিশোধে ব্যবহৃত স্থায়ী কার্ড ‘র্যাপিড পাস’-এর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে প্রতিদিন হাজারো যাত্রীকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে একক যাত্রার টিকিট কিনে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এ অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তির পাশাপাশি অসন্তোষও বাড়ছে যাত্রীদের মধ্যে।
বর্তমানে মেট্রোরেলে তিন ধরনের কার্ড ব্যবহৃত হয়—একক যাত্রার টিকিট (অস্থায়ী), এমআরটি পাস এবং র্যাপিড পাস (স্থায়ী)। র্যাপিড পাস ও এমআরটি পাস ব্যবহারকারীদের জন্য রয়েছে ১০ শতাংশ ভাড়ায় ছাড়, যার ফলে এই কার্ডের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।
তবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কার্ডের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কার্ড সংগ্রহে তাদের সক্ষমতা নেই, কারণ এটি সরকারের অনুমোদিত আরেক সংস্থা—ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)-এর দায়িত্ব।
সরবরাহে অনিয়ম, প্রশ্ন ডিটিসিএ’র সক্ষমতা নিয়ে
ডিএমটিসিএলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমানে দিনে চার লাখের বেশি যাত্রী মেট্রোরেল ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ যাত্রী র্যাপিড ও এমআরটি পাস ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এখন পর্যাপ্ত কার্ড না থাকায় অনেকেই খালি হাতে ফিরছেন।
ডিটিসিএ সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারিতে ‘প্রাইম পাওয়ার সলিউশন’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে ২.৫ লাখ র্যাপিড পাস সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা ইন্দোনেশিয়া থেকে কার্ড আমদানি করছে। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ১ লাখ ১৮ হাজার কার্ড সরবরাহ করতে পেরেছে।
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, “র্যাপিড পাসের সংকট কমাতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ কার্ড চলে এসেছে, বাকিগুলো চলতি মাসেই চলে আসবে।” তিনি আরও জানান, “এই কার্ড শুধু মেট্রোরেলে নয়, অন্যান্য গণপরিবহনেও ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।”
ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, যাত্রীদের ক্ষোভ
সোমবার সকাল ১০টায় সচিবালয় মেট্রো স্টেশনে দেখা যায়, একক টিকিট কেনার জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। ফার্মগেটে কর্মরত নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিনই একক যাত্রার টিকিট কিনতে হচ্ছে। এতে সময় এবং ধৈর্য্য—দুটোরই অপচয় হচ্ছে।”
পরিবাগের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, “হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেলে যদি একটা কার্ড না পাওয়া যায়, সেটা খুবই দুঃখজনক। স্ত্রীর জন্য একটি র্যাপিড পাস কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।”
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অসন্তোষের ঝড়
ফেসবুকের জনপ্রিয় গ্রুপ ‘র্যাপিড অ্যান্ড এমআরটি পাস কার্ড ইউজার কমিউনিটি অব বাংলাদেশ’-এ এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রী। গ্রুপের এক সদস্য লিখেছেন, “কার্ড কখন দিচ্ছে, কখন দিচ্ছে না—এই বিষয়টা এখন লটারির মতো। দিনে মাত্র ৩০ মিনিট কার্ড বিক্রি হয় শুনে অবাক হয়েছি।”
কর্তৃপক্ষের নীরবতা
র্যাপিড পাস সংকট নিয়ে ডিএমটিসিএলের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ-এর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মেট্রোরেল যাত্রীদের নিকট র্যাপিড পাস এখন যেন সোনার হরিণ। দীর্ঘ সময় ধরে চলমান এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে ঢাকা শহরের এই আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রতি যাত্রীদের আস্থা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।