রবিবার, ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

তুষার হোসেন | প্রবাস বুলেটিন

১৭ দিনের বন্ধের পর আবারও পুরোদমে চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। জুলাই আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে কর্মচারীদের সংঘর্ষের জেরে স্থবির হয়ে পড়া এ হাসপাতালটি শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা থেকে জরুরি ও বহির্বিভাগসহ পূর্ণাঙ্গ সেবা কার্যক্রম শুরু করে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ১ হাজার ৪৫৯ জন রোগী বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন এবং ৬৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রয়োজন অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অপারেশনও চালু রয়েছে।

হাসপাতালটিতে এখনও ‘জুলাই আন্দোলনে’ আহত চারজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন, বাকিরা ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন। এর আগে, ৪ জুন সীমিত আকারে জরুরি বিভাগ ও ১২ জুন আউটডোর সেবা চালু করা হয়েছিল। তবে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা কার্যক্রম শনিবার থেকেই চালু হয়।

সংঘর্ষ ও পরবর্তী পরিস্থিতি

গত ২৮ মে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মী, রোগী ও স্বজনদের মধ্যে সংঘর্ষের পর হাসপাতালের প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। নিরাপত্তার অভাবে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মীরা কর্মবিরতিতে যান।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে সংঘর্ষে আহতদের জন্য আলাদা খাবার সরবরাহসহ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের নেতৃত্বে ৪ জুন এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে নির্ধারণ করা হবে কারা চিকিৎসা পাবে এবং কারা ছাড়পত্র পাবে।

বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৫০ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন এবং চারজন এখনও চিকিৎসাধীন। ভবিষ্যতে যাদের চিকিৎসা প্রয়োজন হবে, তাদের সিএমএইচ, বিএসএমএমইউ এবং ইসলামী চক্ষু হাসপাতালে রেফার করা হবে।

চিকিৎসাসেবা পুনরায় চালু: ফিরে এসেছে আস্থা

শনিবার হাসপাতাল চত্বরে র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ টহল ছিল চোখে পড়ার মতো। চিকিৎসক, নার্স ও রোগীরা নিরাপত্তা পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন। অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।

চোখের চিকিৎসার জন্য দেশের অন্যতম ভরসাস্থল এই ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতালটিতে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের যন্ত্রপাতি ও অপারেশন সুবিধা। প্রতিদিন গড়ে ৫০টিরও বেশি জটিল চক্ষু অপারেশন হয়ে থাকে। সংঘর্ষের কারণে চিকিৎসা বন্ধ থাকায় হাজারো রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।

হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “পুরোদমে সেবা চালু হয়েছে। রোগীরা আগের মতোই ভর্তি হচ্ছেন, অপারেশনও চলছে। তবে আমাদের প্রধান দাবি, ভবিষ্যতে যেন এমন অনিরাপদ পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।”

রোগীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষের ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

উপসংহার

একটি সংঘর্ষ ১৭ দিন ধরে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ চক্ষু হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল, যা শুধু প্রতিষ্ঠান নয়—গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য একটি অশনিসংকেত। প্রশাসনিক উদ্যোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আবারও চিকিৎসাসেবা চালু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের মধ্যে। তবে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার অভাবে এমন পরিস্থিতি ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি হলে, তার দায় কার—সে প্রশ্ন থেকেই যাবে।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version