প্রতিবেদন: তুষার হোসেন | প্রবাস বুলেটিন
চার দিনের যুক্তরাজ্য সফর শেষ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরটি ‘সরকারি’ হলেও, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার নির্ধারিত সাক্ষাৎ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও ইউনূস নিজে বিষয়টিকে হতাশার চোখে না দেখে ‘একটি সম্ভাবনার সূচনা’ হিসেবে দেখছেন।
বিবিসির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘দ্য ওয়ার্ল্ড টুনাইট’-এ এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, “হয়তো তিনি (স্টারমার) ব্যস্ত ছিলেন বা অন্য কোনো কারণে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে এতে আমার জন্য একটা বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমি তাকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। তিনি বাস্তব পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখতে পারবেন।”
ড. ইউনূস আরও বলেন, “এটা ইতিহাসের এক বিশেষ মুহূর্ত। আমরা অতীতকে পেছনে ফেলে এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।”
টিউলিপ প্রসঙ্গে সরাসরি অবস্থান
সাক্ষাৎকারে উঠে আসে লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের নাম, যিনি বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলার আসামি। যদিও টিউলিপ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং যুক্তরাজ্যের নৈতিকতা বিষয়ক স্বাধীন উপদেষ্টাও তাকে দায়মুক্ত ঘোষণা দিয়েছেন।
সাংবাদিক রাজিনি বৈদ্যনাথন জানতে চান, ড. ইউনূস কি টিউলিপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন? জবাবে তিনি স্পষ্ট বলেন, “না, আমি দেখা করবো না। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। আমি সেই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে চাই না।”
দুদকের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধান উপদেষ্টা জানান, “আমি আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখি যে তারা সঠিক কাজটাই করছে। বিষয়টি এখন আদালতের আওতায়, আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে মামলা চলবে কিনা।”
আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, “আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। বাংলাদেশ কখনও বলেনি, কোনো তথ্য দেওয়া হবে না। সবকিছু সময় সাপেক্ষ।” তবে টিউলিপের আইনজীবীরা দাবি করছেন, তারা এখনো দুদকের পক্ষ থেকে কোনও যোগাযোগ পাননি।
ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “যদি আইন সেটা চায়, তাহলে সেটা হতে পারে।”
যুক্তরাজ্যের সাহায্য হ্রাস ও রোহিঙ্গা সংকট
ব্রিটিশ সহায়তা হ্রাস নিয়ে প্রশ্ন করলে ড. ইউনূস জানান, এটি নিঃসন্দেহে এক ধাক্কা। তবে জীবন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সব সময় ওঠানামার মধ্য দিয়ে যায়।
তিনি বলেন, “ব্রিটেন সাহায্য কমিয়েছে—আজ কমেছে, কাল বাড়তেও পারে। আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। ইউএসএইড যেমন হঠাৎ করেই শতভাগ অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দিলো, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকটে। তবুও সমস্যাগুলো তো থেকেই যাচ্ছে, সমাধান আমাদেরকেই করতে হবে।”
টিউলিপের প্রতিক্রিয়া
বিবিসি অনুষ্ঠানটিতে টিউলিপ সিদ্দিক আমন্ত্রণ পেলেও অংশ নেননি। তবে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “অধ্যাপক ইউনূস আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি না হওয়ায় আমি হতাশ। তিনি এক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন এবং অপপ্রচারে ভরা। আমি চাই, আদালতেই প্রমাণ হোক, এই মামলার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”
উপসংহার
ড. ইউনূসের এই সফর যতটা না কূটনৈতিক অর্জনের, তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক ব্যাকরণে পরিপূর্ণ। স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়া যেমন প্রশ্ন তুলেছে, তেমনি টিউলিপ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ‘আইনি নিরপেক্ষতা’র অবস্থানও তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী ইউনূসের এই অবস্থান কতটা কার্যকর প্রমাণ হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।