রিপোর্ট: তুষার, প্রবাস বুলেটিন
বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ডেঙ্গু এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে বরিশালের উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। একইসঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনার নতুন সংক্রমণও বাড়ছে। এ দুই সংকট নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
🔴 ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, ২৪৯ জন ভর্তি
শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪৯ জন। এ সময়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে, যা চলতি বছরে মৃতের সংখ্যা দাঁড় করিয়েছে ৩০ জনে। এর আগে ১৩ জুন একদিনে সর্বোচ্চ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে আক্রান্তদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ শতাংশ নারী। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৯৮৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৫ হাজার ২৯৯ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন।
⚠️ বরগুনায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ রূপ, হটস্পট ঘোষণা
ঢাকার বাইরে বরগুনা জেলার ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। বরগুনা সদর হাসপাতালেই বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা শয্যার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। ৫০ শয্যার স্থলে সেখানে রোগী রাখা হয়েছে বারান্দা ও করিডোরেও।
বরগুনা জেলায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ৬ জন বরগুনা হাসপাতালে এবং ৮ জন ঢাকা ও বরিশালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যে বরগুনাকে ডেঙ্গুর হটস্পট ঘোষণা করেছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রেজোয়ানুর আলম জানান, রোগীর চাপে চিকিৎসা সেবায় ব্যাঘাত ঘটছে। স্যালাইন, প্লাটিলেট কিট, রক্ত পরীক্ষার উপকরণ এবং জনবল সংকট পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।
🦠 করোনার নতুন সংক্রমণেও বাড়ছে উদ্বেগ
গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯১টি নমুনা পরীক্ষায় ২৬ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছেন একজন। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট আক্রান্ত ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮৩৩ জন এবং মৃত ২৯ হাজার ৫০৩ জন। শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৮.৯৩ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা জানান, করোনার নতুন উপধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে হাসপাতালগুলোতে উপসর্গযুক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু জেলা পর্যায়ে আইসিইউ, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ও অক্সিজেন সরবরাহের সংকট রয়েছে।
📉 স্বাস্থ্য খাতে ঘাটতি, বাস্তবায়ন হয়নি সুপারিশ
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর মতো সংক্রামক রোগ মোকাবিলায় বিগত সরকারের সময় স্বাস্থ্যখাতে যে সংস্কার প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন বেশ কিছু সুপারিশ করলেও এখনও বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়নি।
🛠️ সরকারের উদ্যোগ ও প্রস্তুতি
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, করোনা পরীক্ষায় আরটি-পিসিআর এবং র্যাপিড এন্টিজেন কিট ব্যবহারে দেশজুড়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৭টি কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং অন্যান্য জেলা থেকে ভিটিএম পাঠিয়ে নমুনা সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বরগুনায় পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে ১ হাজার ব্যাগ স্যালাইন, স্বল্পমেয়াদি চিকিৎসক পদায়ন ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
📌 বিশ্লেষণ ও সতর্কবার্তা
ডেঙ্গু ও করোনার একসঙ্গে সংক্রমণ বাড়ার এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত সরঞ্জাম মজুত, এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়নে তাৎক্ষণিক ও সমন্বিত কার্যক্রম চালুর তাগিদ দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা। নতুবা এই দুই মহামারি একসঙ্গে সামাল দেওয়া হবে চরম কঠিন।
📍 আপডেট পেতে চোখ রাখুন প্রবাস বুলেটিনে।
