মঙ্গলবার, ২৮শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে, অনিশ্চয়তায় দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি ও প্রবাসী শ্রমিকরা

১৭ জুন ২০২৫

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, এর গভীর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও। হরমুজ প্রণালী ঘিরে বাড়তে থাকা উত্তেজনা, জ্বালানির সরবরাহ অনিশ্চয়তা এবং ধর্মীয় ও কূটনৈতিক ভারসাম্যহীনতার আশঙ্কা—এই তিনটি বড় সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো।

জ্বালানি নিরাপত্তায় বড় হুমকি

বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ তেল সরবরাহ হয় হরমুজ প্রণালী হয়ে। এই রুটে বিঘ্ন ঘটলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো—বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ—জ্বালানি সংকটে পড়বে সবচেয়ে বেশি। ইরান থেকে তেল আমদানি করে ভারত ও পাকিস্তান, যেখানে বাংলাদেশ সরাসরি তেল না কিনলেও বিশ্ববাজারে দামের ওপর নির্ভরশীল। ফলে যুদ্ধের দীর্ঘায়ন এই দেশগুলোতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত এবং শিল্প খাতে স্থবিরতা তৈরি করতে পারে।

কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা কঠিন চ্যালেঞ্জ

ভারত দীর্ঘদিন ধরে ইরান ও ইসরায়েল—উভয়ের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে আসছে। ইরানের সঙ্গে অবকাঠামো ও জ্বালানিতে অংশীদারিত্ব থাকলেও ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে গভীর সহযোগিতা রয়েছে। ফলে সরাসরি সংঘাতের সময় ভারসাম্য রক্ষা করা ভারতের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। একই ধরনের চাপ পাকিস্তানের ওপরও রয়েছে, যারা উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলে।

ধর্মীয় উত্তেজনার ঝুঁকি

যুদ্ধ পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয় এবং শিয়া-সুন্নি বিভক্তি ঘনীভূত হয়, তবে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমপ্রধান দেশগুলো—বিশেষ করে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান—ধর্মীয় অস্থিরতায় পড়তে পারে। বিশেষত পাকিস্তানে ধর্মীয় উগ্রপন্থা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইতিহাস থাকায় সেখানে এই সংকট সবচেয়ে প্রকট হতে পারে।

শরণার্থী চাপ ও প্রবাসী সংকট

যুদ্ধের কারণে ইরান বা আফগানিস্তান থেকে নতুন করে শরণার্থী প্রবাহ শুরু হলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে মানবিক সংকট তৈরি হতে পারে। এর বাইরে উপসাগরীয় দেশগুলো যদি নিরাপত্তাজনিত কারণে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো শুরু করে, তবে বাংলাদেশ ও নেপালের মতো রেমিট্যান্সনির্ভর দেশগুলোর অর্থনীতি চরম চাপের মুখে পড়বে।

ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ইরান-সীমান্তবর্তী তিনটি জেলা—তুরবত, পাঞ্জগুর ও গোয়াদার—সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে।

ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বাড়ার আশঙ্কা

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের মতো প্রকল্পগুলো এই সংঘাতের কারণে হুমকির মুখে পড়তে পারে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তিগুলোও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বাড়াতে চাবে, যা নতুন ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করবে।


পরিপ্রেক্ষিত ও করণীয়

বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধ দীর্ঘ হলে দক্ষিণ এশিয়া হয়ে উঠতে পারে বৈশ্বিক ভূরাজনীতির নতুন কেন্দ্রবিন্দু। এই অবস্থায় অঞ্চলটির দেশগুলোকে এখনই কৌশলগত প্রস্তুতি নিতে হবে। জ্বালানি মজুত, কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা, ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং মানবিক সংকট মোকাবেলায় প্রাথমিক নীতিমালা নির্ধারণ এখন সময়ের দাবি।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version