‘ফ্যাসিবাদী কালো আইন মানি না’—সচিবালয় উত্তাল কর্মচারী বিক্ষোভে
স্টাফ রিপোর্টার | ঢাকা |
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত সচিবালয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। সময়মতো দাবি পূরণ না হলে রোববার (২২ জুন) থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা–কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনের সামনে বিক্ষোভে বসেন শতাধিক কর্মচারী। মুহূর্তেই সচিবালয় এলাকা ‘ফ্যাসিবাদী কালো আইন মানি না’, ‘সচিবালয় জেগেছে’—এই ধরনের স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে।
আন্দোলনের নেতৃত্বে ঐক্য ফোরামের শীর্ষ নেতারা
বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবির ও মো. নুরুল ইসলাম, কো-মহাসচিব নজরুল ইসলামসহ অন্য নেতারা।
তারা বলেন,
“চাকরিচ্যুত করার মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়ার সুযোগ দিয়ে যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, তা গণবিরোধী, স্বেচ্ছাচারী ও দুর্নীতির পথ উন্মুক্ত করে দেবে।”
কী রয়েছে অধ্যাদেশে?
সরকার গত ২৫ মে রাতে গেজেট আকারে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধের জন্য কোনো বিভাগীয় তদন্ত ছাড়াই কেবল কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
এর আগে ২৪ মে থেকে এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। ঈদের আগ পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যান এবং সরকারের সাতজন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করেন।
সরকার কমিটি করলেও কর্মীদের আশ্বাসে আস্থা নেই
এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ৪ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অধ্যাদেশটি পর্যালোচনা করতে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল-এর নেতৃত্বে একটি ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রথম বৈঠক বসবে সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে।
আইন উপদেষ্টা ইতোমধ্যেই কর্মচারীদের প্রতি আন্দোলন স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন, তবে কর্মচারী নেতারা বলছেন—
“যতদিন না অধ্যাদেশ বাতিল হবে, ততদিন আন্দোলন চলবে। আশ্বাস দিয়ে বেশি দিন আন্দোলন ঠেকানো যাবে না।”
আগামি পদক্ষেপ: অর্থ মন্ত্রণালয় ঘেরাও
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ না এলে রোববার থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করার ঘোষণা দেন আন্দোলনরত নেতারা।
তারা বলেন,
“আমরা প্রশাসন অচল করতে চাই না। কিন্তু প্রশাসন যদি অন্যায়ভাবে আমাদের চাকরি শেষ করার নিয়ম চালু করে, তাহলে আমরাও বাধ্য হবো প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।”
প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অধ্যাদেশে অধিকার সুরক্ষা না রেখে শাস্তির পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে, যা প্রশাসনের স্থিতিশীলতা ও কর্মপরিবেশের জন্য হুমকি হতে পারে।
সরকার যদি দ্রুত পরিস্থিতি সমাধানে না আসে, তবে সচিবালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া আশঙ্কা রয়েছে।
সম্পাদনা ডেস্ক
সূত্র: আন্দোলনরত নেতৃবৃন্দের বক্তব্য, সচিবালয়现场 পর্যবেক্ষণ, সরকারী গেজেট ও সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের বিবৃতি।